০১:০৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানবিক পুলিশ শওকত যে কারনে চাকরী হারালেন

print news -

মানবিক পুলিশ মো. শওকত হোসেন যে কারনে চাকরী হারালেন। এ নিয়ে দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে আসছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে শওকতের বিরুদ্ধে নেওয়া বিভাগীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অনুরোধ জানায় সিএমপি। সেদিন দিনগত রাত ১২টা ৩২ মিনিটে সিএমপির অফিসিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়।

পোস্টে লেখা হয়: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কনস্টেবল মো. শওকত হোসেনকে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদ থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রচার মাধ্যমে তার অতীতের কার্যক্রমের বিষয়ে আলোকপাত করা হলেও কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে।

তিনি গত ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মস্থলে (বন্দর বিভাগ, সিএমপি) ইচ্ছাকৃতভাবে গরহাজির (অনুপস্থিত) থাকেন। কোনো যৌক্তিক কারণ এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে গরহাজির থাকা যেকোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য গর্হিত অপরাধ, যা চূড়ান্ত অসদাচরণ হিসেবে গণ্য।

এতে আরও বলা হয়, শওকত হোসেনকে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদরদপ্তরের আদেশে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিস থেকে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ কুমিল্লা জেলায় বদলি করা হলে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেননি এবং রহস্যজনকভাবে গরহাজির থাকেন। তার গরহাজির সম্পর্কে কোনো তথ্য কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেননি। পরে চলতি বছরের ১ মার্চ অর্থাৎ ৩৫৩ দিন পরে কুমিল্লা জেলায় যোগদান করেন।

বস্তুত তিনি ৪২৪ দিন কর্মস্থল থেকে গরহাজির থাকেন। কুমিল্লা জেলায় গরহাজির থাকায় তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা জেলায় গরহাজির হওয়ার প্রতিবেদনে অসুস্থতাজনিত কারণে হাজির না হওয়ার কথা বললেও কোনো চিকিৎসা সনদ উপস্থাপন করতে পারেননি। তবে তিনি চাকরিতে গরহাজির থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবসময়ই হাজির ছিলেন এবং তাকে কোনো সময়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ মনে হয়নি।

ফেসবুক পোস্টে আরও উল্লেখ করে, যিনি এক বছরের বেশি সময় কর্মস্থলে গরহাজির থাকেন, তিনি পুলিশের মতো একটি শৃঙ্খলা বাহিনীতে সংযুক্ত থাকতে পারেন না বলেই প্রতীয়মান হয়। এই ধরনের অপেশাদার, শৃঙ্খলা বহির্ভূত কার্যক্রমের পরেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে তা প্রশাসনিকভাবে খারাপ নজির হিসেবেই গণ্য হতো।

তাছাড়াও তিনি নিজেই অভিযোগের ব্যাপারে আত্মসমর্থনমূলক বক্তব্যে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে অভিহিত করেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং মানবিক কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন। এই অবস্থায় কনস্টেবল শওকতের বিরুদ্ধে নেওয়া বিভাগীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে সিএমপি।

গত ১৬ এপ্রিল শওকতের চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা। আদেশে বলা হয়েছে, ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন কমিশনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন।

বেওয়ারিশ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করায় তখন গণমাধ্যমে পুলিশের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।

২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে একাধিক কনস্টেবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এই কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।

জনপ্রিয় সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধা সংগঠক আব্দুর রাজ্জাকের ইন্তেকাল।। বিশিষ্টজনের শোক প্রকাশ

মানবিক পুলিশ শওকত যে কারনে চাকরী হারালেন

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০১:২৭:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩
print news -

মানবিক পুলিশ মো. শওকত হোসেন যে কারনে চাকরী হারালেন। এ নিয়ে দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে আসছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে শওকতের বিরুদ্ধে নেওয়া বিভাগীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর অনুরোধ জানায় সিএমপি। সেদিন দিনগত রাত ১২টা ৩২ মিনিটে সিএমপির অফিসিয়াল ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়।

পোস্টে লেখা হয়: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কনস্টেবল মো. শওকত হোসেনকে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদ থেকে বরখাস্ত করার বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। প্রচার মাধ্যমে তার অতীতের কার্যক্রমের বিষয়ে আলোকপাত করা হলেও কী কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে।

তিনি গত ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মস্থলে (বন্দর বিভাগ, সিএমপি) ইচ্ছাকৃতভাবে গরহাজির (অনুপস্থিত) থাকেন। কোনো যৌক্তিক কারণ এবং কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে গরহাজির থাকা যেকোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য গর্হিত অপরাধ, যা চূড়ান্ত অসদাচরণ হিসেবে গণ্য।

এতে আরও বলা হয়, শওকত হোসেনকে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদরদপ্তরের আদেশে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিস থেকে ২০২২ সালের ১৩ মার্চ কুমিল্লা জেলায় বদলি করা হলে তিনি কুমিল্লায় যোগদান করেননি এবং রহস্যজনকভাবে গরহাজির থাকেন। তার গরহাজির সম্পর্কে কোনো তথ্য কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করেননি। পরে চলতি বছরের ১ মার্চ অর্থাৎ ৩৫৩ দিন পরে কুমিল্লা জেলায় যোগদান করেন।

বস্তুত তিনি ৪২৪ দিন কর্মস্থল থেকে গরহাজির থাকেন। কুমিল্লা জেলায় গরহাজির থাকায় তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তিনি কুমিল্লা জেলায় গরহাজির হওয়ার প্রতিবেদনে অসুস্থতাজনিত কারণে হাজির না হওয়ার কথা বললেও কোনো চিকিৎসা সনদ উপস্থাপন করতে পারেননি। তবে তিনি চাকরিতে গরহাজির থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবসময়ই হাজির ছিলেন এবং তাকে কোনো সময়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ মনে হয়নি।

ফেসবুক পোস্টে আরও উল্লেখ করে, যিনি এক বছরের বেশি সময় কর্মস্থলে গরহাজির থাকেন, তিনি পুলিশের মতো একটি শৃঙ্খলা বাহিনীতে সংযুক্ত থাকতে পারেন না বলেই প্রতীয়মান হয়। এই ধরনের অপেশাদার, শৃঙ্খলা বহির্ভূত কার্যক্রমের পরেও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে তা প্রশাসনিকভাবে খারাপ নজির হিসেবেই গণ্য হতো।

তাছাড়াও তিনি নিজেই অভিযোগের ব্যাপারে আত্মসমর্থনমূলক বক্তব্যে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে অভিহিত করেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং মানবিক কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেন। এই অবস্থায় কনস্টেবল শওকতের বিরুদ্ধে নেওয়া বিভাগীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তার অতীত কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত করে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে সিএমপি।

গত ১৬ এপ্রিল শওকতের চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা। আদেশে বলা হয়েছে, ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।২০১৯ সালে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের আদেশে মানবিক পুলিশ ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন কমিশনার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন।

বেওয়ারিশ মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে ইতিবাচক কার্যক্রমের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করায় তখন গণমাধ্যমে পুলিশের এই উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন।

২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষদের নিভৃতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম-পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষদের সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে একাধিক কনস্টেবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এই কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।