০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেমিকার শেষ ইচ্ছায় হাসপাতালে সিঁদুর দান

print news -

ক্যানসারের কাছে হার প্রেমিকার, শেষ ইচ্ছায় হাসপাতালেই সিঁদুর দান ।

শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল মধ্য কুড়ির মেয়েটার ৷ ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিলেন না ৷ অস্ফুট স্বরে কেবল বলেছিলেন শেষ ইচ্ছেটা ৷ বলেছিলেন, মনের মানুষটা যেন একটি বার তাঁর সিঁথিটা রাঙিয়ে দেন ৷ আর মনের মানুষের সেই কথা রাখতে কসুর করেননি সুব্রত ৷ দশ বছর ধরে তো এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি ৷ মেয়ের কথা মতো, হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই হয়েছিল ব্যবস্থা ৷ সেখানেই মনের মানুষকে সিদুঁর পরিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, আটকে রাখতে পারলেন না ৷

মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে সব বন্ধন ছেদ করে চলে গেলেন বীথি ৷ গল্প-উপন্যাস, সেলুলয়েডের পর্দাকে হার মানানো এ বৃত্তান্ত । ছোটোবেলার পরিচয় খুব সহজেই গাঢ় হয়েছিল ৷ ছোটো থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ৷ সদ্য যৌবনে পা রাখা দুটো মন নিজেদের মতো করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন ৷ কিন্তু, হঠাৎ একটা খবর দমকা হাওয়ার মতো সব কিছুকে এলোমেলো করে দিল ৷ জানা গেল, মনের মানুষটা জটিল কর্কট রোগে আক্রান্ত ৷ ছোটো মেয়ের এমন অসুখের কথা শুনে প্রথমে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেননি কালিপদ দাস।

ভারতীয় রেলের কর্মী কালিপদবাবুর তিন মেয়ে, এক ছেলে ৷ শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের দাস বাড়ির ছোটো মেয়েটাকে দেখে ভালো লেগেছিল উত্তর দিনাজপুরের সুব্রত কুণ্ডুর ৷ সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হতে খুব একটা সময় নেয়নি ৷ যখন যৌবনের দুটি হাত এক সঙ্গে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, তখনই সামনে আসে বীথির অসুখের কথা ৷ শুরু হয় চিকিৎসা ৷ শুরু হয়েছিল কেমো থেরাপি ৷ যার জেরে মাথায় চুল প্রায় সবটাই উঠে যেতে থাকে।

আস্তে আস্তে বুড়িয়ে যেতে থাকেন বীথি ৷ হারিয়ে যেতে থাকে যৌবনের সেই লাবণ্য ৷ তখন 2017 সাল৷ একটি হাতও কেটে বাদ দিতে হয় ৷ ফুটফুটে মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে সকলের কাছ থেকে ৷ কিন্তু, সে দিনও একটি বারের জন্য মনের মানুষটার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুব্রত ৷ পাশে থেকেছেন, সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ৷ হাতে হাত ধরে বলেছিলেন লড়াই করার কথা৷ চিকিৎসার প্রয়োজনে কখনও মুম্বই, কখনই শিলিগুড়ি যেতে হয়েছিল বীথিকে ৷

কখনই বীথিকে সঙ্গ ছাড়া করেননি সুব্রত ৷ প্রথমে না জানলেও ততদিনে সুব্রতর পরিচয় জানা হয়ে গেছে দাস পরিবারের সকলে ৷ এক দিন মেয়ের মোবাইলে চোখ পড়তেই সব স্পষ্ট হয়েছিল কালিপদ দাসের ৷ ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়ের ভবিষ্যৎ জানলেও সাহস পাননি বাধা দেওয়ার ৷কিন্তু, বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে তফাতটা আকাশ-পাতাল ৷ মন শক্তি জোগানোর কথা বললেও, বীথির শরীর কিন্তু ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছিল ৷ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে ৷ গত শনিবার ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিলেন না ৷ বারবার বুজে আসছিল চোখ দুটো।

চিকিৎসকরাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ৷ তখনই মুখফুটে শেষ ইচ্ছায় কথাটা বলেছিলেন বীথি ৷ মেয়ের সেই ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেন তাঁর বাবা-মা ৷ আয়োজন করা হয় বিয়ের ৷ বীথির নাকে তখন অক্সিজেন মাস্ক । স্বপ্ন পূরণের কিছু মুহূর্ত পড়েই বিছানায় ঢলে পড়েন বীথি ৷ তখনও একটা হাত সুব্রতর হাতে ধরা ৷ শরীরটা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয় পড়তে থাকে৷ চিকিৎসকরা শেষ চেষ্টা শুরু করার আগেই সব শেষ ৷ চোখের সামনেই বীথিকে শেষ বিদায় দিলেন সুব্রত৷ মেয়েকে হারালেও যেন একটা ছেলে পেলেন বীথির বাবা-মা ৷

তাঁরা বলেছেন, মেয়ের কঠিন সময় যে ভাবে সুব্রত পাশে ছিল, তা কথায় প্রকাশ করতে পারব না৷ মেয়েকে হারিয়েছি ৷ কিন্তু, এমন একটা ছেলেকে পাব ভাবতেও পারিনি ৷ আর সুব্রত! তখনও চোখের কোণায় চিক চিক করছে বিন্দুগুলো ৷ শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না ৷ কথা জড়িয়ে আসছে ৷ একটু যেন একলা থাকতে চাইছেন ৷ চার পাশের পরিবেশটা তখন সুব্রতর কাছে বড্ড অচেনা ৷ তখনও ভাবেননি কী করবেন ৷ বাকি জীবনটা কি একলাই কাটাবেন তিনি ! স্মৃতিটুকু সম্বল করে…

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধা সংগঠক আব্দুর রাজ্জাকের ইন্তেকাল।। বিশিষ্টজনের শোক প্রকাশ

প্রেমিকার শেষ ইচ্ছায় হাসপাতালে সিঁদুর দান

প্রকাশিত হয়েছেঃ ১১:১১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০২২
print news -

ক্যানসারের কাছে হার প্রেমিকার, শেষ ইচ্ছায় হাসপাতালেই সিঁদুর দান ।

শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল মধ্য কুড়ির মেয়েটার ৷ ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিলেন না ৷ অস্ফুট স্বরে কেবল বলেছিলেন শেষ ইচ্ছেটা ৷ বলেছিলেন, মনের মানুষটা যেন একটি বার তাঁর সিঁথিটা রাঙিয়ে দেন ৷ আর মনের মানুষের সেই কথা রাখতে কসুর করেননি সুব্রত ৷ দশ বছর ধরে তো এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি ৷ মেয়ের কথা মতো, হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই হয়েছিল ব্যবস্থা ৷ সেখানেই মনের মানুষকে সিদুঁর পরিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, আটকে রাখতে পারলেন না ৷

মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে সব বন্ধন ছেদ করে চলে গেলেন বীথি ৷ গল্প-উপন্যাস, সেলুলয়েডের পর্দাকে হার মানানো এ বৃত্তান্ত । ছোটোবেলার পরিচয় খুব সহজেই গাঢ় হয়েছিল ৷ ছোটো থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ৷ সদ্য যৌবনে পা রাখা দুটো মন নিজেদের মতো করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন ৷ কিন্তু, হঠাৎ একটা খবর দমকা হাওয়ার মতো সব কিছুকে এলোমেলো করে দিল ৷ জানা গেল, মনের মানুষটা জটিল কর্কট রোগে আক্রান্ত ৷ ছোটো মেয়ের এমন অসুখের কথা শুনে প্রথমে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেননি কালিপদ দাস।

ভারতীয় রেলের কর্মী কালিপদবাবুর তিন মেয়ে, এক ছেলে ৷ শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের দাস বাড়ির ছোটো মেয়েটাকে দেখে ভালো লেগেছিল উত্তর দিনাজপুরের সুব্রত কুণ্ডুর ৷ সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হতে খুব একটা সময় নেয়নি ৷ যখন যৌবনের দুটি হাত এক সঙ্গে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, তখনই সামনে আসে বীথির অসুখের কথা ৷ শুরু হয় চিকিৎসা ৷ শুরু হয়েছিল কেমো থেরাপি ৷ যার জেরে মাথায় চুল প্রায় সবটাই উঠে যেতে থাকে।

আস্তে আস্তে বুড়িয়ে যেতে থাকেন বীথি ৷ হারিয়ে যেতে থাকে যৌবনের সেই লাবণ্য ৷ তখন 2017 সাল৷ একটি হাতও কেটে বাদ দিতে হয় ৷ ফুটফুটে মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে সকলের কাছ থেকে ৷ কিন্তু, সে দিনও একটি বারের জন্য মনের মানুষটার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুব্রত ৷ পাশে থেকেছেন, সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ৷ হাতে হাত ধরে বলেছিলেন লড়াই করার কথা৷ চিকিৎসার প্রয়োজনে কখনও মুম্বই, কখনই শিলিগুড়ি যেতে হয়েছিল বীথিকে ৷

কখনই বীথিকে সঙ্গ ছাড়া করেননি সুব্রত ৷ প্রথমে না জানলেও ততদিনে সুব্রতর পরিচয় জানা হয়ে গেছে দাস পরিবারের সকলে ৷ এক দিন মেয়ের মোবাইলে চোখ পড়তেই সব স্পষ্ট হয়েছিল কালিপদ দাসের ৷ ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়ের ভবিষ্যৎ জানলেও সাহস পাননি বাধা দেওয়ার ৷কিন্তু, বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে তফাতটা আকাশ-পাতাল ৷ মন শক্তি জোগানোর কথা বললেও, বীথির শরীর কিন্তু ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসছিল ৷ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে ৷ গত শনিবার ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিলেন না ৷ বারবার বুজে আসছিল চোখ দুটো।

চিকিৎসকরাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ৷ তখনই মুখফুটে শেষ ইচ্ছায় কথাটা বলেছিলেন বীথি ৷ মেয়ের সেই ইচ্ছাকেই মর্যাদা দেন তাঁর বাবা-মা ৷ আয়োজন করা হয় বিয়ের ৷ বীথির নাকে তখন অক্সিজেন মাস্ক । স্বপ্ন পূরণের কিছু মুহূর্ত পড়েই বিছানায় ঢলে পড়েন বীথি ৷ তখনও একটা হাত সুব্রতর হাতে ধরা ৷ শরীরটা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয় পড়তে থাকে৷ চিকিৎসকরা শেষ চেষ্টা শুরু করার আগেই সব শেষ ৷ চোখের সামনেই বীথিকে শেষ বিদায় দিলেন সুব্রত৷ মেয়েকে হারালেও যেন একটা ছেলে পেলেন বীথির বাবা-মা ৷

তাঁরা বলেছেন, মেয়ের কঠিন সময় যে ভাবে সুব্রত পাশে ছিল, তা কথায় প্রকাশ করতে পারব না৷ মেয়েকে হারিয়েছি ৷ কিন্তু, এমন একটা ছেলেকে পাব ভাবতেও পারিনি ৷ আর সুব্রত! তখনও চোখের কোণায় চিক চিক করছে বিন্দুগুলো ৷ শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না ৷ কথা জড়িয়ে আসছে ৷ একটু যেন একলা থাকতে চাইছেন ৷ চার পাশের পরিবেশটা তখন সুব্রতর কাছে বড্ড অচেনা ৷ তখনও ভাবেননি কী করবেন ৷ বাকি জীবনটা কি একলাই কাটাবেন তিনি ! স্মৃতিটুকু সম্বল করে…