নিউজ ডেস্ক: নীলফামারীতে কানাডাপ্রবাসী আফরোজা বেগম দেশে ফিরে গ্রামের বাড়ি নীলফামারীতে একটি জমি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাংক থেকে টাকাও তোলেন ৩০ লাখ। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বামী কানাডাপ্রবাসী আশরাফুল আলম (৪৮)। জমি কেনার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা সরিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন আশরাফুল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আফরোজাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আশরাফুল। হত্যার পর বাড়ির আঙিনায় স্ত্রীর মরদেহ মাটিচাপা দিয়ে কানাডায় চলে যান।
গত বছরের (২০২৩ সালের) ২৬ মে রাজধানীর দক্ষিণখানে স্ত্রী আফরোজাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন আশরাফুল। এ ঘটনায় আফরোজার ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত ২৪ ডিসেম্বর প্রবাসী আশরাফুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুন। চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলার চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- আফরোজার শ্বশুর শামছুদ্দিন আহমেদ, দেবর সজীব আলম, সজীবের স্ত্রী তাহমিনা বাশার ও খালাশাশুড়ি পান্না চৌধুরী। গত ২৪ ডিসেম্বর আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তবে মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। আফরোজাকে হত্যার পর মরদেহ বাড়ির আঙিনায় মাটিচাপা দিয়ে কানাডায় চলে যান আশরাফুল। পরে পান্না চৌধুরীর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তা। আশরাফুল তখন স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘আসামি পান্না চৌধুরী এ হত্যার ঘটনা স্বীকার করে জানিয়েছেন, আফরোজাকে হত্যার পর মরদেহ বাড়ির আঙিনায় মাটিচাপা দিয়ে কানাডায় চলে যান আশরাফুল। পরে পান্না চৌধুরীর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কর্মকর্তা। আশরাফুল তখন স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং তা ধামাচাপা দিতে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে লোভনীয় প্রস্তাব দেন।’
ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘মামলাটি ধামাচাপা দিতে প্রধান আসামি লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন কৌশল হিসেবে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। পরে এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘ভিকটিম আফরোজা বেগম দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করতেন। কানাডায় বসবাসের সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আসামি আশরাফুল আলমের। আফরোজা ডিভোর্সি ছিলেন। তার ছেলে-মেয়েরাও তার সঙ্গে বসবাস করতেন। আফরোজার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন আশরাফুল। এরপর ২০২২ সালে তারা বিয়ে করেন। পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা বাংলাদেশে আসেন।’
অভিযুক্ত আশরাফুল আলম
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রেজিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার ভিকটিম ও প্রধান আসামি- দুজনই কানাডাপ্রবাসী। ভিকটিমের অনেক টাকা ছিল। আশরাফুল পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রীকে হত্যা করেন, যা তদন্ত উঠে এসেছে। এই মামলায় আশরাফুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি।’
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও ভিকটিকের ভাই আরিফুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আফরোজা কানাডায় চাকরি করতেন। ২০২২ সালে আশরাফুলের সঙ্গে তার পরিচয়। পরে তারা বিয়ে করেন। আশরাফুল সবার সঙ্গে খুবই ভালো আচরণ করতেন। দেশে আসার পর তিন মাস ছিলেন এখানে। তখনও খুবই ভালো আচরণ করতেন আশরাফুল। সেই আশরাফুলই যে আমার বোনকে হত্যা করবেন এমনটা কেউ ভাবতে পারিনি।’
টাকার জন্য আফরোজাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আরিফুল বলেন, ‘আপুর সব টাকা নেওয়ার জন্য আশরাফুল পরিকল্পিতভাবে সবকিছু করেছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আশরাফুল আমার বোনের কাছ থেকে অনেক টাকা নেন। ওই টাকা ফেরত চাওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়। এসময় আশরাফুলকে দেশে ফিরিয়ে এনে সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার দাবি জানান মামলার বাদী।
সুত্র: জাগো নিউজ