ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ২১ মুসলিম দেশ

ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ২১ মুসলিম দেশ : মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাত ঘিরে যখন সারা বিশ্ব উদ্বিগ্ন, তখন এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির বিরোধিতা করে ২১টি মুসলিমপ্রধান দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। কায়রো নেতৃত্বাধীন এ জোট সোমবার (১৬ জুন) প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে এই বিবৃতি দেয়। এতে সংঘাত বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয় এবং পুরো অঞ্চলকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত রাখার জোর দাবি তোলা হয়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ইরানে ইসরায়েল সরাসরি বিমান হামলা চালায়, যার জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা শুরু করে। এ পর্যন্ত এই সংঘাতে দুই পক্ষের মিলিয়ে অন্তত ৩০০ জন নিহত এবং আরও প্রায় ১,০০০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মুসলিম বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশ এই প্রথমবারের মতো একযোগে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান ও ইসরায়েলের এই সরাসরি সংঘাত গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে বলা হয়, “এই সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, যা সমগ্র অঞ্চলকে অশান্ত করে তুলবে। এখনই সমন্বিত ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো স্পষ্টভাবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে অবস্থান নেয়। তারা বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ধরনের ‘নির্বাচনী নীতিমালার’ ভিত্তিতে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে চলা চলবে না। এ মন্তব্য ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, যেটি এখনও আন্তর্জাতিক তদারকির আওতায় আনেনি তেলআবিব সরকার।
এই দেশগুলো চায়, মধ্যপ্রাচ্য যেন একটি ‘পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল’ হিসেবে গড়ে ওঠে এবং অঞ্চলটির সকল রাষ্ট্র যেন জাতিসংঘের “নন-প্রোলিফারেশন অব নিউক্লিয়ার উইপন” (এনপিটি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
এই গুরুত্বপূর্ণ যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে নিম্নোক্ত মুসলিমপ্রধান দেশগুলো:
উত্তর আফ্রিকা ও সাহেল অঞ্চল: আলজেরিয়া, মিসর, লিবিয়া, মাউরিতানিয়া, সুদান, চাদ
মধ্যপ্রাচ্য: বাহরাইন, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত
হর্ন অব আফ্রিকা ও উপকূলীয় অঞ্চল: জিবুতি, সোমালিয়া, কমোরোস, গাম্বিয়া
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: পাকিস্তান, ব্রুনেই
ইউরেশিয়া অঞ্চল: তুরস্ক
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিবৃতি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চেষ্টাকে জোরদার করতে পারে এবং বিশ্বজনমতকে সংঘাত নিরসনের দিকে পরিচালিত করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে, মধ্যপ্রাচ্যকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার প্রচেষ্টার প্রতি পুনরায় মনোযোগ দেওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করেছে