বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

কমিউনিটি ক্লিনিক: প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবার বিশ্বস্বীকৃত রোল মডেল

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সিএইচসিপিদের সঙ্গে আলোচনা সভা

বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট প্রকাশিত: শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৫৫ এম
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সিএইচসিপিদের সঙ্গে আলোচনা সভা

বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে বসে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে কমিউনিটি ক্লিনিক (CC)। মাত্র দুই দশকের মধ্যে এই উদ্যোগ আজ শুধু দেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশংসিত। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউনিসেফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের এ মডেলকে উন্নয়নশীল দেশের জন্য এক অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।https://dghs.gov.bd/

শুক্রবার (১ আগষ্ঠ) রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে প্রায় ২০০ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ১৫ জন প্রয়াত সিএইচসিপির পরিবারকে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো: আক্তারুজ্জামান এর নিজ উদ্যোগে এক লক্ষ টাকা করে বিশেষ অনুদান প্রদান করা হয়।

উপ সচিব নাসির উদ্দিন, প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শামীম রেজা’র সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার। বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন ডা. আসিফ মাহমুদ; পরিচালক (মাঠ প্রশাসন), ডা. গীতা রানী দেবী; পরিচালক (প্রশিক্ষক), মো. ফেরদৌস ; বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি প্রমুখ। এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. আখতারুজ্জামান; ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিয়া হায়দার বলেন- প্রান্তিক জনগণের কাছে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমার বিএনপি সরকার বিগত দিনে ইউনিয়নে ইউনিয়নে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এখন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই সেবার বেইজমেন্ট তৈরি করতে হবে। তিনি আরো বলেন -আমাদের বিএনপি সরকারকে আপনারা সহযোগিতা করলে এই সেবাকে আরো জোরদার করা হবে। সভায় সভাপতির বক্তব্যে বলেন- এই সেবা একটি মহান পেশা।আপনারা আপনাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করবেন এবং আপনাদের সকল দাবীগুলো পর্যায়ক্রমে আপনারা পেয়ে যাবেন।https://dghs.gov.bd/

কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ৮ বিভাগ থেকে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি ক্লিনিক এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম, (ঢাকা) সিনিয়র সহ সভাপতি রায়হান আলী, (রংপুর) সহ সভাপতি ফেরদৌস হোসেন,(রাজশাহী) সাধারণ সম্পাদক মোঃ নঈম উদ্দিন, (চট্রগ্রাম) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরাম চৌধুরী (সিলেট) মোঃ তরিকুজ্জামান (খুলনা) মাইন উদ্দিন রাহাত(ময়মনসিংহ)মাকছুদুর রহমান জিলাদার (বরিশাল) মল্লিকা আক্তার ও সালমা আক্তার।
উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।

১৬৩ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক : খান মোঃ রেজা-উন-নবী

প্রয়াতদের পরিবারের অশ্রুসজল নীরবতা এবং সহকর্মীদের আবেগঘন উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে এক অনন্য মাত্রা দেয়। অনুদান গ্রহণ করতে এসে এক স্বজন বলেন— “আমাদের প্রিয়জন হয়তো আর নেই, কিন্তু তাঁদের কাজ দেশের হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছে—এটাই আমাদের সান্ত্বনা।”
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, “বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিএইচসিপিরা অসামান্য ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ ও নিবেদনের কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক আজ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।” তিনি বলেন ভবিষ্যত বাংলাদেশের স্বাস্থের নেতৃত্ব দেবে সিএইচসিপিরা এবং প্রতিটি সিসিতে ৩জন সিএইচসিপি নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবার মূল স্তম্ভ: বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সক্রিয় রয়েছে। এসব ক্লিনিক প্রতিদিন লাখো মানুষকে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য, টিকাদান, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, সাধারণ রোগের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলের মানু ষের জন্য যেখানে চিকিৎসক বা হাসপাতালের নাগাল পাওয়া কষ্টসাধ্য, সেখানে এই ক্লিনিকগুলো হয়ে উঠেছে জীবনরক্ষাকারী আশ্রয়স্থল। বিশেষ করে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য এটি এক অনন্য সেবা।

বিশ্বজুড়ে প্রশংসা: কমিউনিটি ক্লিনিককে এখন “বাংলাদেশ মডেল” বলা হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার এ কার্যকর উপায়কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বারবার প্রশংসা করেছে। ইউনিসেফের মতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় এটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুসরণীয় উদ্যোগ।

জাতিসংঘের মহাসচিব একাধিকবার কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের এই উদ্ভাবনী পদক্ষেপ আজ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অঙ্গনে গর্বের প্রতীক।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আরও শক্তিশালী করতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং দক্ষ জনবল দিয়ে সমৃদ্ধ করা জরুরি।
সিএইচসিপিদের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি। কারণ এঁরাই মাঠপর্যায়ে থেকে প্রান্তিক মানুষের জীবনে সরাসরি পরিবর্তন আনছেন।

শেষকথা: বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক কেবল একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়—এটি প্রান্তিক মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। গ্রামীণ জনপদের অসহায় মানুষ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল—সবখানেই এ উদ্যোগ প্রশংসিত হচ্ছে।
আজ বিশ্ব জানে, স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের এই উদ্ভাবন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন নিভৃতপথের সিএইচসিপিরা, যাঁরা প্রতিদিন পরিশ্রম করে প্রমাণ করছেন—মানুষের পাশে দাঁড়ানোই সবচেয়ে বড় মানবতা।

শাহবাগে শিক্ষকদের পুলিশের বাধা, জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৪০ পিএম
শাহবাগে শিক্ষকদের পুলিশের বাধা, জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষকদের শাহবাগ অভিমুখী পদযাত্রা করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। 

শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগে এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে সকালে দশম গ্রেডে বেতনসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো শিক্ষক সেখানে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন অংশসহ চারটি সংগঠন এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো-

১️। সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন প্রদান,

২️। চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা দূর করা,

৩️। শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।

অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৩৭ পিএম
অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

১০ম গ্রেডে বেতনসহ ৩ দফা দাবিতে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষকদের ৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

বিকালে দাবি আদায়ে শাহবাগে আন্দোলনরতরা পথযাত্রা করলে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।

একইসঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে গরম পানিও ছোড়া হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক রক্তাক্ত হয়েছেন। দু’জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।”

সকাল থেকেই দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগে এলে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। ওই সময় ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। যদিও পুলিশের দাবি, মিছিল নিয়ে শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়।

পদযাত্রায় বাঁধা দেওয়ার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, “মিছিল নিয়ে শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাহবাগে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। ওই সময় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।”

সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ৩ দফা দাবি হলো-

১) ১০ম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকদের বেতন দেয়া।

২) শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

৩) চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।

সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রতারক চক্রের হুমকি

সাংবাদিককে হত্যা ও মিথ্য মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৬:৫০ পিএম
সাংবাদিককে হত্যা ও মিথ্য মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে হত্যার হুমকি ও বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৩ নভেম্বর পুঠিয়া থানায় এবং মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় দুটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।

হুমকি ও অপপ্রচারের শিকার ওই সাংবাদিকের নাম রকিবুল হাসান রকি (২৪)। তিনি পুঠিয়া উপজেলার পালোপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক ‘সময়ের আলো’ ও স্থানীয় দৈনিক ‘সানশাইন’ পত্রিকায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, গত ২৫ অক্টোবর তিনি জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো ও স্থানীয় দৈনিক সানশাইন পত্রিকায় “হঠাৎ ধনী রিকশা চালক আবুল” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে পুঠিয়া উপজেলার পালোপাড়া সমাজের মোড় এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের সম্পদের উৎস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আবুল প্রতারণার মাধ্যমে রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকার মৃত ছোলায়মান আলীর ছেলে মোল্লা সাইফ উল মোবারকের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযুক্ত আবুল হোসেন ও ভুক্তভোগী মোল্লা সাইফ উল মোবারক উভয় পক্ষের মধ্যে গত ৫ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা হান্নানের মুরগির দোকানে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকায় আপস-মীমাংসা হয় বলে জানা গেছে।

তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই অভিযুক্ত পক্ষ সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকিকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়া, দুই পক্ষের আপসনামায় মনগড়া তথ্য সংযোজন করে সাংবাদিকের নাম জড়িয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যার কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, শুধুমাত্র সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতারক আবুল হোসেন ও মোল্লা সাইফ উল মোবারকের এ ঘটনার বিস্তর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দুজনের এ লেনদেনের পিছনে বড় কোনো অপরাধ লুকিয়ে আছে।

সাংবাদিকের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই আবুল হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে তারা সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকিকে সরাসরি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নানা উপায়ে হুমকি প্রদান করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে হত্যার হুমকি এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকি বলেন, “সংবাদ প্রকাশের পর থেকে আমি নিয়মিত হুমকি পাচ্ছি। আমি ও আবুল একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় বাড়ির আশপাশে অপরিচিত লোকজন নিয়ে আবুল প্রায়ই ঘোরাঘুরি করছে। এতে আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনায় আমি গত ৩ নভেম্বর পুঠিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই সংবাদটি করেছি- এতে কারও ব্যক্তিগত ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পর যেভাবে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমি প্রশাসনের কাছে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, একটি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে রাজশাহী অফিসে কর্মরত ক্যামেরাপার্সন জানান, নগরীর তালাইমার এলাকার মৃত ছোলায়মান আলীর ছেলে মোল্লা সাইফ উল মোবারক তাঁর আত্মীয়। তাঁর সাথে প্রতারণা করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পুঠিয়ার আবুল হোসেন নামের ওই ব্যক্তি।
স্থানীয় ওই ক্যামেরাপার্সনের দেওয়া তথ্য এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রমাণের ভিত্তিতে সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকি বিষয়টি অনুসন্ধান করে সংবাদ প্রকাশ করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর আবুল ও মোল্লা সাইফ উল মোবারক উভয় পক্ষ আপস-মীমাংসায় বসেন এবং লিখিত মীমাংসাপত্রে তারা বিষয়টিকে ব্যবসায়িক লেনদেন হিসেবে উল্লেখ করেন।

এর আগে, সাংবাদিককের আত্মীয় পরিচয়দানকারী ব্যক্তি অভিযোগ করেন, দুটি হত্যা মামলায় ভয় দেখিয়ে আবুল তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছিলেন। ওই ক্যামেরাপার্সন এ প্রতারণা চক্রের সদস্য কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়াও প্রতারক আবুল সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওই ভিডিও ফুটেজে অসংলগ্ন কথা বার্তা বলেছে। তার কথায় পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে তিনি মিথ্যা বলছেন। এখানে ওই ক্যামেরাপারসন ১৪ লাখ টাকা আপোষ মিমাংসায় গিয়ে প্রমাণ করেন তিনি পূর্ব থেকে এদের সাথে জড়িত।
এ ঘটনায় রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিককে ফাঁসানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নাই। সব হুমকি ধামকি প্রতিহত করা হবে। তবে প্রকাশিত সংবাদটিসহ ভুক্তভোগী মোল্লা সাইফ উল মোবারকসহ ওই ক্যামেরাপার্সনের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আবুলকে কেন অর্ধ কোটি টাকা মোল্লা সাইফ দিলো? পরে কেন উভয় পক্ষ ১৪ লাখ টাকায় আপোষ মিমাংসা হলো? এ টাকা কিসের লেনদেন, এসব অ-মিমাংসীত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন। সেই সাথে তাদের উভয়ের আয়ের উৎস খোঁজার জন্য দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এঘটনার বিষয়ে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, অভিযোগসহ বিষয়গুলো পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে

error: এই ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট কপি করা যাবে না।