ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নিক্ষেপের চিন্তা করছেন ট্রাম্প?

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে কি না, তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত ও তার ভূরাজনৈতিক প্রভাব তুলে ধরেছে। তবে প্রতিবেদনে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ না থাকায় বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
সোমবার (১৬ জুন) দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস–এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইরানের সুরক্ষিত পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোর্ডোতে হামলার পরিকল্পনা বিবেচনায় থাকতে পারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এই হামলায় ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’-এর কথা উল্লেখ করা হয়। এই বোমা শুধুমাত্র বি-২ বোমারু বিমানের মাধ্যমে নিক্ষেপ করা সম্ভব।
প্রতিবেদনের লেখক ডেভিড ই. স্যাঙ্গার ও জনাথন সোয়ান লিখেছেন, “যদি ট্রাম্প এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে একটি নতুন সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে—যে ধরনের যুদ্ধে অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি তিনি তার দু’টি নির্বাচনী প্রচারণাতেই দিয়েছিলেন।”
তবে, প্রতিবেদনের শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে—এটি একটি ‘বিশ্লেষণ’ প্রতিবেদন, সংবাদ নয়। ফলে এতে কোনো নির্দিষ্ট উৎস বা প্রমাণের উল্লেখ নেই। আল জাজিরা-র একটি প্রতিবেদনও এই দিকটি স্পষ্ট করে বলেছে যে, বিষয়টি একটি মতামতনির্ভর বিশ্লেষণ, যার পেছনে নির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক উৎস নেই।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প কানাডায় অনুষ্ঠিত জি–৭ সম্মেলন নির্ধারিত সময়ের আগেই ত্যাগ করেন। হোয়াইট হাউস জানায়, “মধ্যপ্রাচ্যের সংকট পরিস্থিতি বিবেচনায় জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকে অংশ নিতে তাকে দ্রুত ফিরতে হচ্ছে।”
ফক্স নিউজ জানিয়েছে, ট্রাম্প তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুম’-এ ডেকেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ট্রাম্প সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য নেতাদের বলেন যে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
একইদিন, ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে তেহরানের বাসিন্দাদের শহর ত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দেন। তিনি লেখেন, “আমার প্রস্তাবিত চুক্তি ইরান মেনে নিলে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারে না—আমি বারবার এটা বলেছি।”
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, ট্রাম্প তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে ইরানিদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, আলোচনায় ইরানের সম্ভাব্য প্রতিনিধি হতে পারেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।
আরাঘচি এক বিবৃতিতে জানান, “যদি ট্রাম্প সত্যিই কূটনীতিতে আগ্রহী হন এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে চান, তবে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ফলপ্রসূ হতে পারে।”
তবে কূটনৈতিক এসব সম্ভাবনার মাঝেই ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য, তেহরান ত্যাগের আহ্বান এবং জরুরি বৈঠকের খবর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে।