যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার হুমকি ইরানের

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছানো এই সময়, ইসরায়েলের ওপর প্রতিশোধ নিতে ইরান যে পাল্টা হামলা চালিয়েছে, তাতে পশ্চিমা শক্তির জড়িত থাকার অভিযোগে এবার কড়া হুঁশিয়ারি দিল তেহরান। ইরান জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলকে প্রতিরোধে সহায়তা করলে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক ঘাঁটি ও জাহাজগুলোকে সরাসরি হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
শুক্রবার (১৩ জুন) ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শনিবার (১৪ জুন) সকালেই ইরান শত শত ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত এবং ৮০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
তেহরানের এই প্রতিক্রিয়া থেমে নেই শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। ইরানের রাষ্ট্রীয় ও আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স ইসরায়েলের এই হামলা প্রতিহত করতে সরাসরি সহায়তা দেয়, তাহলে পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর ও আশপাশের অঞ্চলে থাকা তাদের সামরিক ঘাঁটি ও জাহাজগুলো ইরানের হামলার ঝুঁকিতে পড়বে।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোপূর্বে বলেছিলেন, “ইসরায়েলকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে।” পেন্টাগন সূত্রের বরাতে জানা যায়, মার্কিন সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ইরান থেকে উৎক্ষেপণকৃত কিছু ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, তার দেশ ইরানকে প্রতিহত করতে ইসরায়েলকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা সরাসরি কোনো সামরিক সহায়তা দেয়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার উত্তেজনা প্রশমনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের (১৩ জুন) বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক ম্যাককয় পিট বলেন, “যেকোনো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত গোষ্ঠী বা স্বাধীনভাবে কাজ করা কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সামরিক ঘাঁটি বা স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালায়, তাহলে ইরানকে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে, এবং তা হবে অত্যন্ত শোচনীয়।”
এদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি একটি ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছিল বলেই আগাম হামলা চালানো হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এই দাবির ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, ইরান অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপে ছিল এমন কোনও তথ্য নেই।
তেহরানে হামলার সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, তারা ডজনখানেক যুদ্ধবিমান দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে। হামলায় তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরের একটি হ্যাঙ্গার ধ্বংস হয়। আরও ভয়াবহ হচ্ছে—তেহরানের একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন শিশু।
উত্তেজনার এই ক্রমবর্ধমান আবহে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি আমাদের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইরানি হামলা বন্ধ না হয়, তাহলে তেহরান পুড়বে।”
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা শক্তিগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়লে এই যুদ্ধ দ্রুতই বিস্তৃত আকার নিতে পারে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে।