সিলেটে এই প্রথম বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার লোক উৎসব পালিত

সিলেটে উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিয়ানীবাজারের কৃতিসন্তান লোক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাউল দর্শনের প্রাণ পুরুষ বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার ‘ লোক উৎসব ২০২৫’।
শনিবার (২১ জুন) দুপুর ২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবটি, যা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার লোক উৎসবের আহ্বায়ক এস এম মানিকের সভাপতিত্বে এবং জান্নাতুল নাজনীন আশা ও এম এ ওমর এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন তরফদার।
বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার ‘লোক উৎসব ২০২৫’- এর উদ্বোধন করেন প্রথম আলোর সিলেট ব্যুরো প্রধান ও বাংলা লোক গানের গবেষক সুমন কুমার দাস।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাছন রাজা লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. জাহিরুল ইসলাম অচিনপুরী।
প্রধান বক্তা ড. জাহিরুল ইসলাম অচিনপুরী বলেন, আমরা যারা নিজেদেরকে বাউল শিল্পী বলে দাবি করি বা বর্তমানে বাউল অঙ্গনে বিভিন্নভাবে কাজ করি, আমরা যদি আত্মচিন্তায় মগ্ন হই তাহলে বর্তমানে বাউল সমাজের যে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিচ্ছে আমরা অনেকটা জনসাধারণের কাছে অসম্মানের দিকে চলে যাচ্ছি। এখন আমাদের বেশি বেশি করে লোক উৎসব করতে হবে। সাধারণের কাছে বাউল সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে।
সুমন কুমার দাস বলেন, বাউলদের শুদ্ধু মানুষে পরিনত হতে হবে। একজন বাউলের সর্বক্ষেত্রে শুদ্ধতার প্রয়োজন। বাউলের যে মতপার্থক্য রয়েছে সেগুলোকে ভুলে এর আদর্শকে ধারণ করবো। তাহলেও প্রকৃত বাউল হওয়া যাবে।
বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার লোক উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি এস এম মানিক বলেন লোক সংগীত আমাদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত। বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার ছিলেন সেই শিকড়ের একজন অগ্রসেনানী। তার স্মরণে এমন আয়োজন আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে।
তিনি আরোও বলেন, বাউল শিল্পী হেলাল উদ্দিন সরকার স্বশিক্ষিত হলেও ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। তার অন্তরের অনুভব, মানবতা ও প্রেমের বোধ তাকে প্রবেশ করিয়ে দেয় আধ্যাত্মিক জগতে। সাধন-ভজনের মাধ্যমে তিনি খুঁজে বেড়াতেন আত্মার মুক্তি ও পরম সত্যকে। সেই ভাবজগত থেকেই জন্ম নেয় তার অসংখ্য গান— যা আজও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার গানগুলো শুধু সুরের বাহন নয়, ছিল আত্মার আহ্বান, ছিল প্রেম, প্রকৃতি, মানবতা ও আত্মদর্শনের এক অনন্য প্রকাশ। সাধক এই শিল্পী লোকজ সংস্কৃতির অঙ্গনে হয়ে উঠেছেন এক অনন্য অনুরাগের নাম।
এই বাউল সাধক একসময় বেহালার প্রেমে পড়ে যান এমনভাবে, যেন দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেই সুরের মধ্যে ডুবে থাকতেন। তাঁর চারপাশের জগৎ যেন হারিয়ে গিয়েছিল ওই সুরের মাধুর্যে। একদিন মা উদ্বিগ্ন হয়ে বলেছিলেন,
“আর বাদ দে বাবা, ঘুমাতে তো হবে!” কিন্তু তিনি মায়ের কথাও শুনতে পাননি—এতটাই তীব্র ছিল তাঁর সেই ভেতরের টান।
সেই মুহূর্ত থেকেই তাঁর ভেতর জন্ম নেয় এক অনন্য সাধনার বীজ। সুর আর আত্মিক অনুভবের মিলনে তিনি ধীরে ধীরে প্রবেশ করেন এক গভীর আধ্যাত্মিক জগতে। বেহালার তারে তারে যেন তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ঈশ্বরের ডাক, হৃদয়ের নিবিড় পথ। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর মরমী যাত্রা—সাধনা, সঙ্গীত আর আত্মদর্শনের এক দীর্ঘ পথচলা।
অনুষ্ঠানে বাউল হেলাল উদ্দিন সরকার এর শিষ্য সহ সিলেটের অনেক গুণী বাউল শিল্পীগণ তাঁদের সংগীত পরিবেশনা করেন।