নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে বেতন গ্রেড ১২টি করার প্রস্তাব ২০২৫

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বা নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন । গত ২৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ফেডারেশনের একটি জরুরি সভায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি চূড়ান্ত করা হয়েছে-এই দাবিগুলো অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পেশ করা হয়েছে -বেতন গ্রেড ১২টি করার প্রস্তাব ২০২৫
বেতন কাঠামোতে পরিবর্তন কি চাওয়া হয়েছে? ফেডারেশন ২০টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ১২টি গ্রেডে বেতন কাঠামো নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন ১,৪০,০০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে । এই বেতন ১:৪ অনুপাতে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে । বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির দাবি করা হয়েছে । যেমন- বাড়ি ভাড়া ভাতা ঢাকা মহানগরে মূল বেতনের ৮০%, বিভাগীয় শহরে ৭০%, জেলা শহরে ৬৫% এবং উপজেলা/থানা শহরে ৬০% করার দাবি করা হয়েছে ।
চিকিৎসা ভাতা কত দাবী করা হয়েছে? বর্তমানের চিকিৎসা ফি এবং পরীক্ষার খরচ বিবেচনা করে চিকিৎসা ভাতা ১০,০০০ টাকা করার দাবি করা হয়েছে । শিক্ষা ভাতা এক সন্তানের জন্য ৩,০০০ টাকা এবং দুই সন্তানের জন্য ৬,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে । যাতায়াত ভাতা ৩,০০০ টাকা, টিফিন/লাঞ্চ ভাতা প্রতিদিন ১৫০ টাকা, এবং ধোলাই ভাতা ৬০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে । পেনশনের হার ৯০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% এবং আনুতোষিকের হার ২৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করার দাবি করা হয়েছে ।
ইনক্রিমেন্ট কত শতাংশ দাবী? অবসরের বয়সসীমা চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করার দাবি জানানো হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে । বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৫% এর পরিবর্তে ২০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে । গৃহ ঋণ ফ্ল্যাট ক্রয় বা গৃহ নির্মাণের জন্য সহজ শর্তে ০২% সুদে গ্রেডভিত্তিক ৪০-৮০ লক্ষ টাকা গৃহ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি করা হয়েছে । ফেডারেশন তাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
প্রস্তাবিত পে স্কেল ২০২৫ / ফেডারেশন কর্তৃক গঠিত কমিটি এটি প্রস্তুত করেছে যা সংশোধন সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে
✅ কর্মচারীরা লাভবান হবে কি? হ্যাঁ, কর্মচারীরা নিঃসন্দেহে লাভবান হবে। সর্বনিম্ন বেতন (৩৫,০০০ টাকা) আগের তুলনায় অনেক বেশি, যা নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য বড় সুবিধা। সর্বোচ্চ বেতনও বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে তুলনামূলকভাবে নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি অনেক বেশি (৪ গুণ)। ইনক্রিমেন্ট ধাপগুলো আরও যৌক্তিক করা হলে (যেমন সমান পার্থক্য বা প্রোপোরশনাল বৃদ্ধি), কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য আরও কমবে। সহজভাবে বললে, প্রস্তাবিত পে-স্কেল ২০১৫ সালের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক, তবে গ্রেড পার্থক্যের ধাপ সমান বা অনুপাতে রাখা হলে কর্মচারীদের সন্তুষ্টি আরও বাড়বে।
প্রস্তাবিত গ্রেডভিত্তিক বেতন কাঠামো ২০২৫ । এটি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয় ফেডারেশন সংশোধন করে পেশ করবে
- ১ম গ্রেড – ১,৪০,০০০ টাকা
- ২য় গ্রেড – ১,২৫,০০০ টাকা
- ৩য় গ্রেড – ১,১০,০০০ টাকা
- ৪র্থ গ্রেড – ৯৫,০০০ টাকা
- ৫ম গ্রেড – ৮০,০০০ টাকা
- ৬ষ্ঠ গ্রেড – ৭৫,০০০ টাকা
- ৭ম গ্রেড – ৭০,০০০ টাকা
- ৮ম গ্রেড – ৬৫,০০০ টাকা
- ৯ম গ্রেড – ৬০,০০০ টাকা
- ১০ম গ্রেড – ৫০,০০০ টাকা
- ১১তম গ্রেড – ৪২,০০০ টাকা
- ১২তম গ্রেড – ৩৫,০০০ টাকা
প্রস্তাবিত পে স্কেলে গ্রেড পার্থক্য কি ঠিক আছে?
হ্যাঁ। প্রস্তাবিত গ্রেডভিত্তিক বেতন পার্থক্য ১ম গ্রেড থেকে ২য় গ্রেড পার্থক্য: ১৫,০০০ টাকা, ২য় গ্রেড থেকে ৩য় গ্রেড পার্থক্য: ১৫,০০০ টাকা, ৩য় গ্রেড থেকে ৪র্থ গ্রেড পার্থক্য: ১৫,০০০ টাকা, ৪র্থ গ্রেড থেকে ৫ম গ্রেড পার্থক্য: ১৫,000 টাকা ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ, ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম, ৭ম থেকে ৮ম, ৮ম থেকে ৯ম: ধাপে ধাপে ৫,০০০ টাকা করে কমছে, ৯ম থেকে ১০ম গ্রেড পার্থক্য: ১০,০০০ টাকা, ১০ম থেকে ১১তম গ্রেড পার্থক্য: ৮,০০০ টাকা, ১১তম থেকে ১২তম গ্রেড পার্থক্য: ৭,০০০ টাকা। দেখা যাচ্ছে, উচ্চ গ্রেডে (১-৫) বেতন পার্থক্য ১৫,০০০ টাকা, আর মধ্য ও নিম্ন গ্রেডে ধাপে ধাপে কমে ৫,০০০–১০,০০০ টাকা পার্থক্য রাখা হয়েছে। ২০১৫ সালের পে-স্কেল এর সাথে তুলনা করলে ২০১৫ সালের জাতীয় পে-স্কেলে সর্বনিম্ন বেতন ছিল ৮,২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৮,০০০ টাকা। এবার প্রস্তাবিত স্কেলে সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১,৪০,০০০ টাকা অর্থাৎ— সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বোচ্চ বেতন প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৫ বনাম ২০২৫ প্রস্তাবিত পে-স্কেল তুলনা । 👉 দেখা যাচ্ছে, উচ্চ গ্রেডে প্রবৃদ্ধি ৭০–৯৬% এর মধ্যে কিন্তু নিম্ন গ্রেডে প্রবৃদ্ধি ১০০% থেকে ৩২৪% পর্যন্ত — অর্থাৎ নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।
গ্রেড | ২০১৫ সালের বেতন (আনুমানিক) | ২০২৫ প্রস্তাবিত বেতন | বৃদ্ধি (টাকা) | প্রবৃদ্ধি (%) |
১ম | ৭৮,০০০ টাকা | ১,৪০,০০০ টাকা | ৬২,০০০ টাকা | ৭৯.৫% |
২য় | ৬৬,০০০ টাকা | ১,২৫,০০০ টাকা | ৫৯,০০০ টাকা | ৮৯.৪% |
৩য় | ৫৬,০০০ টাকা | ১,১০,০০০ টাকা | ৫৪,০০০ টাকা | ৯৬.৪% |
৪র্থ | ৫০,০০০ টাকা | ৯৫,০০০ টাকা | ৪৫,০০০ টাকা | ৯০.০% |
৫ম | ৪৩,০০০ টাকা | ৮০,০০০ টাকা | ৩৭,০০০ টাকা | ৮৬.০% |
৬ষ্ঠ | ৩৮,০০০ টাকা | ৭৫,০০০ টাকা | ৩৭,০০০ টাকা | ৯৭.৪% |
৭ম | ৩৫,০০০ টাকা | ৭০,০০০ টাকা | ৩৫,০০০ টাকা | ১০০.০% |
৮ম | ৩০,০০০ টাকা | ৬৫,০০০ টাকা | ৩৫,০০০ টাকা | ১১৬.৭% |
৯ম | ২৫,০০০ টাকা | ৬০,০০০ টাকা | ৩৫,০০০ টাকা | ১৪০.০% |
১০ম | ২০,০০০ টাকা | ৫০,০০০ টাকা | ৩০,০০০ টাকা | ১৫০.০% |
১১তম | ১৫,০০০ টাকা | ৪২,০০০ টাকা | ২৭,০০০ টাকা | ১৮০.০% |
১২তম | ৮,২৫০ টাকা | ৩৫,০০০ টাকা | ২৬,৭৫০ টাকা | ৩২৪.২% |