১২:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানে জঙ্গি আস্তানাই ইরানের হামলার মূল লক্ষ্য

print news -

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আচমকাই মঙ্গলবার গভীর রাতে হামলা চালায় ইরান। হামলায় দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। তবে প্রশ্ন হলো মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করে পাকিস্তানে কেন হামলা চালালো তেহরান?

বুধবার সকালে গুরুতর অভিযোগ দায়ের করে ইসলামাবাদ বলেছে, মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ বিমান হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগটি সামনে নিয়ে আসে।

সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ইরাক ও সিরিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে ইরান। তেহরানের দাবি, ‘ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরাক ও সিরিয়ার পর একই কারণে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ইরানের এই হামলা চালাল।

এদিকে ‘বিনা উসকানিতে আকাশসীমা লঙ্ঘনের’ ঘটনায় ক্ষুব্দ পাকিস্তান তার দেশ নিযুক্ত তেহরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে। হামলাটিকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রতিবাদও জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

কিন্তু এতকিছু ঘটে গেলেও এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছে তেহরান। তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুর জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে। গোষ্ঠীটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইরানে কালো তালিকাভুক্ত একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলার জন্য এই গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সম্প্রতি ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনা ও তাদের ‘গোয়েন্দা সদর দপ্তরে’ হামলা চালাচ্ছে ইরান। এ জন্য সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা শঙ্কা করছেন, ইরানের এ ধরনের আচরণ উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। গাজা যুদ্ধ তার শততম নৃশংস দিন পার করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে লোহিত সাগরের পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমন করতে ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

তবে বিবৃতিতে নিজেদের ভূখণ্ডে হামলার কথা জানালেও ঠিক কোথায় হামলা চালানো হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলা হয়েছে ইরানের সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জগুরের পাশে। এই প্রদেশের সঙ্গে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের।

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাকার এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রয়েছেন। সেখানেই সম্মেলনের এক ফাঁকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

এই বৈঠকের রেশ না কাটতে হামলার খবর সামনে এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পরিণাম গুরুতর হতে পারে। হামলার ঘটনায় দুই নিষ্পাপ শিশু নিহত হওয়ার পাশাপাশি তিন মেয়ে আহত হয়েছেন।’

আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পাকিস্তান সরকার।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইরানের নুর সংবাদমাধ্যমের এক্স- অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘মিনিটখানেক আগে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে তথাকথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে। রকেট ও ড্রোন হামলায় এসব সদর দপ্তর ধ্বংস হয়ে গেছে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলায় ১১ পুলিশ নিহত হয়। ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল জইশ আল-আদল। জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও জইশ আল-আদল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

ইরান ও পাকিস্তান জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রায়ই পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকে। বলা হয়ে থাকে, একটি দেশে ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা অন্য ভূখণ্ডে হামলা চালায়। তবে এসব ঘটনায় দুপক্ষের সরকারি বাহিনীগুলোর জড়িত হওয়ার ঘটনা বিরল।

এ বিষয়ে এক্স বার্তায় ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ইরান আগেও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তসীমান্ত অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এবারের মতো কোনো অভিযানের কথা মনে করতে পারছি না।’

সতর্ক করে কুগেলম্যান আরও বলেন, এটা পাকিস্তান ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ডোবাতে পারে। এমনকি সবচেয়ে ভালো সময়েও এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুতর সংকট তৈরি করতে পারে।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

।ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুনুর মনোনয়ন বৈধ ; প্রতীক বরাদ্দ যেকোনো সময়!

পাকিস্তানে জঙ্গি আস্তানাই ইরানের হামলার মূল লক্ষ্য

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০২:২০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৪
print news -

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আচমকাই মঙ্গলবার গভীর রাতে হামলা চালায় ইরান। হামলায় দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। তবে প্রশ্ন হলো মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে হঠাৎ করে পাকিস্তানে কেন হামলা চালালো তেহরান?

বুধবার সকালে গুরুতর অভিযোগ দায়ের করে ইসলামাবাদ বলেছে, মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ‘বিধিবহির্ভূতভাবে’ বিমান হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগটি সামনে নিয়ে আসে।

সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে ইরাক ও সিরিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে ইরান। তেহরানের দাবি, ‘ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরাক ও সিরিয়ার পর একই কারণে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ইরানের এই হামলা চালাল।

এদিকে ‘বিনা উসকানিতে আকাশসীমা লঙ্ঘনের’ ঘটনায় ক্ষুব্দ পাকিস্তান তার দেশ নিযুক্ত তেহরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করেছে। হামলাটিকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রতিবাদও জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

কিন্তু এতকিছু ঘটে গেলেও এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছে তেহরান। তবে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম নুর জানিয়েছে, পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ আল-আদলের সদর দপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে। গোষ্ঠীটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ইরানে কালো তালিকাভুক্ত একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলার জন্য এই গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সম্প্রতি ‘সন্ত্রাসীদের’ স্থাপনা ও তাদের ‘গোয়েন্দা সদর দপ্তরে’ হামলা চালাচ্ছে ইরান। এ জন্য সিরিয়া ও ইরাকের কুর্দিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা শঙ্কা করছেন, ইরানের এ ধরনের আচরণ উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। গাজা যুদ্ধ তার শততম নৃশংস দিন পার করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অসহায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে লোহিত সাগরের পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীদের দমন করতে ইয়েমেনে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

তবে বিবৃতিতে নিজেদের ভূখণ্ডে হামলার কথা জানালেও ঠিক কোথায় হামলা চালানো হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলা হয়েছে ইরানের সীমান্তবর্তী বেলুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জগুরের পাশে। এই প্রদেশের সঙ্গে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে ইরানের।

হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাকার এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে রয়েছেন। সেখানেই সম্মেলনের এক ফাঁকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

এই বৈঠকের রেশ না কাটতে হামলার খবর সামনে এসেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পরিণাম গুরুতর হতে পারে। হামলার ঘটনায় দুই নিষ্পাপ শিশু নিহত হওয়ার পাশাপাশি তিন মেয়ে আহত হয়েছেন।’

আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ইসলামাবাদে নিযুক্ত ইরানের শীর্ষ কূটনীতিককে তলব করে পাকিস্তান সরকার।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইরানের নুর সংবাদমাধ্যমের এক্স- অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘মিনিটখানেক আগে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে তথাকথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সদর দপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে। রকেট ও ড্রোন হামলায় এসব সদর দপ্তর ধ্বংস হয়ে গেছে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে হামলায় ১১ পুলিশ নিহত হয়। ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল জইশ আল-আদল। জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও জইশ আল-আদল একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

ইরান ও পাকিস্তান জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য প্রায়ই পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকে। বলা হয়ে থাকে, একটি দেশে ঘাঁটি তৈরি করে জঙ্গিরা অন্য ভূখণ্ডে হামলা চালায়। তবে এসব ঘটনায় দুপক্ষের সরকারি বাহিনীগুলোর জড়িত হওয়ার ঘটনা বিরল।

এ বিষয়ে এক্স বার্তায় ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ইরান আগেও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আন্তসীমান্ত অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এবারের মতো কোনো অভিযানের কথা মনে করতে পারছি না।’

সতর্ক করে কুগেলম্যান আরও বলেন, এটা পাকিস্তান ও ইরানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ডোবাতে পারে। এমনকি সবচেয়ে ভালো সময়েও এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুতর সংকট তৈরি করতে পারে।