০৯:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রা মে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়া ন

print news -

নিউজ ডেস্ক:  দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম জেলা কুড়িগ্রাম। নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে জেলাটির এই দশা। মা ও শিশুমৃত্যুর হার রোধে বাংলাদেশ অনেকাংশে সফল। অনেক জেলা-উপজেলা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে সুনাম কুড়ালেও কুড়িগ্রামে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে মা ও শিশুমৃত্যুর হার বেশি এবং এই হার উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০২২ সালে দেশে প্রতি লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১৫৬ জন প্রসূতি মারা গেছেন। প্রতি হাজার শিশুর জন্মের বিপরীতে ২৫ শিশু (নবজাতকসহ) এক বছর হওয়ার আগেই মারা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩০ মাসে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই সময়ে কুড়িগ্রামে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে ৪২০ জন মা এবং প্রতি হাজারে ৩৮ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে; অর্থাৎ বছরে গড়ে প্রতি লাখে ১৬৮ জন মা এবং প্রতি হাজারে ১৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

কুড়িগ্রামের কয়েকটি উপজেলার মোট ১২টি চরে ২৫ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৬০০ মায়ের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। এতেও দেখা যাচ্ছে, কুড়িগ্রামের চরে মা ও শিশুমৃত্যুর হার জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের হিসাবের চেয়ে বেশি।

সার্বিক উন্নয়নের দিকে কুড়িগ্রাম পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচ্ছিন্ন চরে সেখানকার মানুষের বসবাস। ফলে সরকারি অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এখানে বাল্যবিবাহের প্রবণতাও আছে প্রকটভাবে। তাই সেখানে শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যও ঝুঁকিতে পড়ছে। এমনও দেখা গেছে, বাল্যবিবাহের শিকার এক নারী তিন-তিনবার সন্তান ধারণ করলেও একটি শিশুকেও বাঁচানো যায়নি। সেই মা এভাবে হাহাকার করেন, ‘পরপর তিনটা ছাওয়া পেটে ধরলাম। কিন্তু মা ডাক শুনবার পাইলাম না।’

চরের নারীদের বড় একটি অংশ কোথায় গেলে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা পাবেন, এ সম্পর্কে ধারণা কম। এখনো তাঁরা ধাইয়ের ওপর ভরসা করেন। এসব ধাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও নন। কমিউনিটি ক্লিনিক যে এই সেবা দেয়, সেটিও তাঁদের অজানা। আবার যাঁরা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে যান, তাঁদের অনেকের অভিযোগ, সেখানে পর্যাপ্ত জনবল ও স্বাস্থ্যসেবাসামগ্রীর ঘাটতি আছে। যদিও সিভিল সার্জন এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়। তাঁর মতে, এখানে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের জনসংখ্যা অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা ৮৩টি। এর বিপরীতে আছে ৫০টি। মা ও শিশুর মৃত্যুহার রোধ করার জন্য কুড়িগ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়ানো হোক।

তবে জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। ভূমিকা রাখতে হবে স্থানীয় প্রশাসন, বেসরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদেরও।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

।ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুনুর মনোনয়ন বৈধ ; প্রতীক বরাদ্দ যেকোনো সময়!

কুড়িগ্রা মে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়া ন

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৬:১৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
print news -

নিউজ ডেস্ক:  দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম জেলা কুড়িগ্রাম। নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকার কারণে জেলাটির এই দশা। মা ও শিশুমৃত্যুর হার রোধে বাংলাদেশ অনেকাংশে সফল। অনেক জেলা-উপজেলা স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে সুনাম কুড়ালেও কুড়িগ্রামে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে মা ও শিশুমৃত্যুর হার বেশি এবং এই হার উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০২২ সালে দেশে প্রতি লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১৫৬ জন প্রসূতি মারা গেছেন। প্রতি হাজার শিশুর জন্মের বিপরীতে ২৫ শিশু (নবজাতকসহ) এক বছর হওয়ার আগেই মারা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩০ মাসে এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই সময়ে কুড়িগ্রামে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে ৪২০ জন মা এবং প্রতি হাজারে ৩৮ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে; অর্থাৎ বছরে গড়ে প্রতি লাখে ১৬৮ জন মা এবং প্রতি হাজারে ১৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

কুড়িগ্রামের কয়েকটি উপজেলার মোট ১২টি চরে ২৫ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৬০০ মায়ের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। এতেও দেখা যাচ্ছে, কুড়িগ্রামের চরে মা ও শিশুমৃত্যুর হার জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের হিসাবের চেয়ে বেশি।

সার্বিক উন্নয়নের দিকে কুড়িগ্রাম পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচ্ছিন্ন চরে সেখানকার মানুষের বসবাস। ফলে সরকারি অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এখানে বাল্যবিবাহের প্রবণতাও আছে প্রকটভাবে। তাই সেখানে শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যও ঝুঁকিতে পড়ছে। এমনও দেখা গেছে, বাল্যবিবাহের শিকার এক নারী তিন-তিনবার সন্তান ধারণ করলেও একটি শিশুকেও বাঁচানো যায়নি। সেই মা এভাবে হাহাকার করেন, ‘পরপর তিনটা ছাওয়া পেটে ধরলাম। কিন্তু মা ডাক শুনবার পাইলাম না।’

চরের নারীদের বড় একটি অংশ কোথায় গেলে গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা পাবেন, এ সম্পর্কে ধারণা কম। এখনো তাঁরা ধাইয়ের ওপর ভরসা করেন। এসব ধাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তও নন। কমিউনিটি ক্লিনিক যে এই সেবা দেয়, সেটিও তাঁদের অজানা। আবার যাঁরা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে যান, তাঁদের অনেকের অভিযোগ, সেখানে পর্যাপ্ত জনবল ও স্বাস্থ্যসেবাসামগ্রীর ঘাটতি আছে। যদিও সিভিল সার্জন এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁর দাবি, কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়। তাঁর মতে, এখানে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের জনসংখ্যা অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা ৮৩টি। এর বিপরীতে আছে ৫০টি। মা ও শিশুর মৃত্যুহার রোধ করার জন্য কুড়িগ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা বাড়ানো হোক।

তবে জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। ভূমিকা রাখতে হবে স্থানীয় প্রশাসন, বেসরকারি সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদেরও।