০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গর্ভবতী মায়ের ৫টি বিপদ চিহৃ

গর্ভবতী মায়ের ৫টি বিপদ চিহৃ

print news -

গর্ভবতী মায়ের ৫টি বিপদ চিহৃ, গর্ভাবস্থায় যে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি

গর্ভবতী মায়ের জন্য অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। মনে রাখতে হবে, এই এসময় একই দেহে দু’টি প্রাণের বসত। জন্মদান প্রক্রিয়াও জটিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে কিন্তু এখনও যে পর্যায়ে আছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। গর্ভকালীন মাকে বাড়তি যত্ন নিতে হবে তার পরিবার থেকে। মায়ের ও অনাগত শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নিচের পাঁচটি বিষয় গর্ভবতীর মধ্যে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেগুলো হলো :

১. হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে :প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ বা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তক্ষরণ বা গর্ভফুল না পড়া বিপদের লক্ষণ। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মাকে দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে মা সকে (shock) চলে যাবে অথবা বাচ্চা এবং মা দু’জনের মৃতু হতে পারে।

২. খিচুনি হলে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর যেকোনো সময় যদি খিচুনি দেখা দেয় তবে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত হাসপাতালে মাকে ভর্তি করাতে হবে। খিচুনি একলামসিয়ার (eclampsia) প্রধান লক্ষণ। তাই দ্রুত পদক্ষেপ ও চিকিৎসায় বাচ্চা এবং মা দু’জনের জীবনকেই রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এ রোগে দু’জনই মারা যেতে পারে।

৩. চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথাব্যথা হলে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা পাঁচটি প্রধান বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটি। তাই এ ব্যাপারে মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। যদিও গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একটু রেষ্ট নিলে এ পানি চলেও যায়। কিন্তু যদি পায়ে অতিরিক্ত পানি আসে এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ও পা ভারি হয়ে আসে তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

৪. ভীষণ জ্বর হলে :গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব প্রধান বিপদ চিহ্নের একটি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয় তবে তা অনেক সময় মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন শিবায় এন্টিবাওটিক দিলেই অল্প সময়ে এ জটিলতা দূর হয়ে যায়।

৫. বিলম্বিত প্রসব হলে :প্রসবব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ বের হয়ে আসে, তবে বাসাবাড়িতে প্রসবের চেষ্টা না করে সবারই উচিত মাকে নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। বিলম্বিত প্রসব হলে জন্মের পর শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিচুনি হতে পারে।

গর্ভবতীকে লক্ষ রাখতে হবে:গর্ভবতী মায়েদেরও কিছু বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে গর্ভে শিশুর নড়াচড়া গর্ভাবস্থায় সাধারণত মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের,(মানে ৫ থেকে ৬ মাসের) মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় ও খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভব করেন। ১২ ঘন্টায় কমপক্ষে১০ বার গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত। গর্ভে শিশুর কম নড়াচড়া মানে শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, এমন অবস্থায় দরকার হলে হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন নিতে হবে।

নিয়মিত গর্ভকালীন চেক-আপ: গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩০ সপ্তাহে (মানে ৭ মাস) নূন্যতম প্রতি মাসে একবার এবং ৩০ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে মাকে ডাক্তার দেখানো উচিত। প্রতি চেক আপে ডাক্তার গর্ভবতীর ওজন, রক্তশূন্যতা, পায়ে পানি আসা, রক্তচাপ, বাচচার পজিশন নিশ্চিত করবেন। নিয়মিত গর্ভকালীন চেক-আপ করা জরুরি চেক-আপের মাধ্যমে এই ৫ টি বিপদ থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

গর্ভাবস্থায় যে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি

গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর জন্যই এক নতুন চ্যালেঞ্জের সময়। এসময় অনেক রকম শারীরিক সমস্যা, হরমোনের প্রভাবে মানসিক নানা টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। সেইসঙ্গে থাকে নতুন একটি প্রাণ পৃথিবীতে আনার আনন্দ। গর্ভাবস্থার প্রতিটি দিন হবু মায়ের জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারে। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের রুটিন দেখে বোঝা সম্ভব এই অবস্থায় কোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে কি-না।

সন্তান গর্ভে আসার পরে কিছু জটিলতা প্রায় সব নারীরই হতে পারে। একজন হবু মায়ের জন্য এ বিষয়ে ধারণা রাখা সবচেয়ে জরুরি। জটিলতাগুলো সম্পর্কে আগেভাগে ধারণা থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের রিপোর্ট অনুযায়ী, একজন সম্পূর্ণ সুস্থ নারীও গর্ভাবস্থায় নানা শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন।

গর্ভবতী অবস্থায় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান টাইমস।

মা হওয়ার আনন্দের মধ্যে দুশ্চিন্তার একটি কারণ হলো, উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষ করে সেকেন্ড ট্রিমেস্টারের পর থেকে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইপারটেনশনে ভোগেন অনেকেই। গর্ভের ভেতরে থাকা ভ্রূণে যথেষ্ট অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়ার জন্য এই সময় হবু মায়ের শরীর বেশি রক্ত পাম্প করে। এই সময় সেই কারণে মাঝে মাঝে ব্লাজ প্রেশার চেক করিয়ে নেয়া প্রয়োজন এবং খাবারে লবণ কম খাওয়া দরকার।

এসময় আরেক ভোগান্তির নাম ডায়াবেটিস। তবে তা শিশুর জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। গর্ভকালীন এই ডায়াবেটিস হবু মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি সময়ের আগেই শিশুর জন্ম পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এসময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই সচেষ্ট থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

গর্ভবতী নারীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে নানা রকম সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এসময় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট, ব্লাডার, কিডনি এবং সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ দেখা দিতে পারে। আগে থেকে সতর্ক থাকলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। এসময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া নামটি খুব বেশি পরিচিত না হলেও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন অনেক হবু মা। হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা, বেশি বয়সে গর্ভাধারণ, স্থূলতার মতো নানা কারণে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হতে পারে। পেটে অসহনীয় ব্যথা, মাথা ব্যথা অথবা চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা হলে বুঝবেন আপনার প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হয়েছে। এই সমস্যা থেকে গর্ভপাত পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভধারণের সাইত্রিশ সপ্তাহ পূরণ হওয়ার আগেই যদি শিশুর জন্ম হয়, তবে তাকে প্রিম্যাচিওর লেবার বলে। প্রিম্যাচিওর লেবারের কারণে দুর্বল, অসুস্থ শিশুর জন্ম হয়। প্রিম্যাচিওর শিশুর ওজন অনেকটা কম হয় এবং বয়সের সঙ্গে ঠিকমতো বাড়ে না। এই সমস্যা এড়িয়ে চলতে হবে।

গর্ভধারণের প্রথম ২০ সপ্তাহে মধ্যে গর্ভপাত হলে তাকে বলে মিসক্যারেজ এবং ২০ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত হলে তাকে বলা হয় স্টিলবার্থ। গর্ভের সমস্যা, ভ্রূণ ঠিকমতো না বাড়লে, গর্ভস্থ ভ্রূণ সংক্রমণের শিকার হলে বা মায়ের কোনো অসুখের কারণে মিসক্য়ারেজ বা স্টিলবার্থ হতে পারে। এটি এড়ানো হবু মায়ের হাতে থাকে না। তবে এরকমটা ঘটলে তার মানসিক অবস্থা উন্নত করতে নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনে বিমান হামলায় নিহত মা, হাসপাতালে শিশুর জন্ম

গর্ভবতী মায়ের ৫টি বিপদ চিহৃ

প্রকাশিত হয়েছেঃ ১২:১৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
print news -

গর্ভবতী মায়ের ৫টি বিপদ চিহৃ, গর্ভাবস্থায় যে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি

গর্ভবতী মায়ের জন্য অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। মনে রাখতে হবে, এই এসময় একই দেহে দু’টি প্রাণের বসত। জন্মদান প্রক্রিয়াও জটিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার আগের তুলনায় অনেক কমেছে কিন্তু এখনও যে পর্যায়ে আছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। গর্ভকালীন মাকে বাড়তি যত্ন নিতে হবে তার পরিবার থেকে। মায়ের ও অনাগত শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে নিচের পাঁচটি বিষয় গর্ভবতীর মধ্যে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেগুলো হলো :

১. হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে :প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ বা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তক্ষরণ বা গর্ভফুল না পড়া বিপদের লক্ষণ। এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মাকে দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে মা সকে (shock) চলে যাবে অথবা বাচ্চা এবং মা দু’জনের মৃতু হতে পারে।

২. খিচুনি হলে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর যেকোনো সময় যদি খিচুনি দেখা দেয় তবে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত হাসপাতালে মাকে ভর্তি করাতে হবে। খিচুনি একলামসিয়ার (eclampsia) প্রধান লক্ষণ। তাই দ্রুত পদক্ষেপ ও চিকিৎসায় বাচ্চা এবং মা দু’জনের জীবনকেই রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এ রোগে দু’জনই মারা যেতে পারে।

৩. চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথাব্যথা হলে : গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা পাঁচটি প্রধান বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটি। তাই এ ব্যাপারে মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। যদিও গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একটু রেষ্ট নিলে এ পানি চলেও যায়। কিন্তু যদি পায়ে অতিরিক্ত পানি আসে এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ও পা ভারি হয়ে আসে তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

৪. ভীষণ জ্বর হলে :গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব প্রধান বিপদ চিহ্নের একটি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয় তবে তা অনেক সময় মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন শিবায় এন্টিবাওটিক দিলেই অল্প সময়ে এ জটিলতা দূর হয়ে যায়।

৫. বিলম্বিত প্রসব হলে :প্রসবব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ বের হয়ে আসে, তবে বাসাবাড়িতে প্রসবের চেষ্টা না করে সবারই উচিত মাকে নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। বিলম্বিত প্রসব হলে জন্মের পর শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিচুনি হতে পারে।

গর্ভবতীকে লক্ষ রাখতে হবে:গর্ভবতী মায়েদেরও কিছু বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে গর্ভে শিশুর নড়াচড়া গর্ভাবস্থায় সাধারণত মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের,(মানে ৫ থেকে ৬ মাসের) মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় ও খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভব করেন। ১২ ঘন্টায় কমপক্ষে১০ বার গর্ভের শিশুর নড়াচড়া স্বাভাবিক। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়া কম হলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত। গর্ভে শিশুর কম নড়াচড়া মানে শিশুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, এমন অবস্থায় দরকার হলে হাসপাতালে ভর্তি ও অক্সিজেন নিতে হবে।

নিয়মিত গর্ভকালীন চেক-আপ: গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩০ সপ্তাহে (মানে ৭ মাস) নূন্যতম প্রতি মাসে একবার এবং ৩০ সপ্তাহের পর প্রতি সপ্তাহে একবার করে মাকে ডাক্তার দেখানো উচিত। প্রতি চেক আপে ডাক্তার গর্ভবতীর ওজন, রক্তশূন্যতা, পায়ে পানি আসা, রক্তচাপ, বাচচার পজিশন নিশ্চিত করবেন। নিয়মিত গর্ভকালীন চেক-আপ করা জরুরি চেক-আপের মাধ্যমে এই ৫ টি বিপদ থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

গর্ভাবস্থায় যে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি

গর্ভাবস্থা প্রত্যেক নারীর জন্যই এক নতুন চ্যালেঞ্জের সময়। এসময় অনেক রকম শারীরিক সমস্যা, হরমোনের প্রভাবে মানসিক নানা টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। সেইসঙ্গে থাকে নতুন একটি প্রাণ পৃথিবীতে আনার আনন্দ। গর্ভাবস্থার প্রতিটি দিন হবু মায়ের জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারে। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের রুটিন দেখে বোঝা সম্ভব এই অবস্থায় কোনো জটিলতা দেখা দিতে পারে কি-না।

সন্তান গর্ভে আসার পরে কিছু জটিলতা প্রায় সব নারীরই হতে পারে। একজন হবু মায়ের জন্য এ বিষয়ে ধারণা রাখা সবচেয়ে জরুরি। জটিলতাগুলো সম্পর্কে আগেভাগে ধারণা থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। মার্কিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের রিপোর্ট অনুযায়ী, একজন সম্পূর্ণ সুস্থ নারীও গর্ভাবস্থায় নানা শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন।

গর্ভবতী অবস্থায় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি সে সম্পর্কে বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান টাইমস।

মা হওয়ার আনন্দের মধ্যে দুশ্চিন্তার একটি কারণ হলো, উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষ করে সেকেন্ড ট্রিমেস্টারের পর থেকে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ এবং হাইপারটেনশনে ভোগেন অনেকেই। গর্ভের ভেতরে থাকা ভ্রূণে যথেষ্ট অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়ার জন্য এই সময় হবু মায়ের শরীর বেশি রক্ত পাম্প করে। এই সময় সেই কারণে মাঝে মাঝে ব্লাজ প্রেশার চেক করিয়ে নেয়া প্রয়োজন এবং খাবারে লবণ কম খাওয়া দরকার।

এসময় আরেক ভোগান্তির নাম ডায়াবেটিস। তবে তা শিশুর জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। গর্ভকালীন এই ডায়াবেটিস হবু মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি সময়ের আগেই শিশুর জন্ম পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এসময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই সচেষ্ট থাকুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

গর্ভবতী নারীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে নানা রকম সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এসময় ইউরিনারি ট্র্যাক্ট, ব্লাডার, কিডনি এবং সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ দেখা দিতে পারে। আগে থেকে সতর্ক থাকলে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব। এসময়ে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রিক্ল্যাম্পসিয়া নামটি খুব বেশি পরিচিত না হলেও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন অনেক হবু মা। হাইপারটেনশন, ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা, বেশি বয়সে গর্ভাধারণ, স্থূলতার মতো নানা কারণে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হতে পারে। পেটে অসহনীয় ব্যথা, মাথা ব্যথা অথবা চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা হলে বুঝবেন আপনার প্রিক্ল্যাম্পসিয়া হয়েছে। এই সমস্যা থেকে গর্ভপাত পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভধারণের সাইত্রিশ সপ্তাহ পূরণ হওয়ার আগেই যদি শিশুর জন্ম হয়, তবে তাকে প্রিম্যাচিওর লেবার বলে। প্রিম্যাচিওর লেবারের কারণে দুর্বল, অসুস্থ শিশুর জন্ম হয়। প্রিম্যাচিওর শিশুর ওজন অনেকটা কম হয় এবং বয়সের সঙ্গে ঠিকমতো বাড়ে না। এই সমস্যা এড়িয়ে চলতে হবে।

গর্ভধারণের প্রথম ২০ সপ্তাহে মধ্যে গর্ভপাত হলে তাকে বলে মিসক্যারেজ এবং ২০ সপ্তাহের পরে গর্ভপাত হলে তাকে বলা হয় স্টিলবার্থ। গর্ভের সমস্যা, ভ্রূণ ঠিকমতো না বাড়লে, গর্ভস্থ ভ্রূণ সংক্রমণের শিকার হলে বা মায়ের কোনো অসুখের কারণে মিসক্য়ারেজ বা স্টিলবার্থ হতে পারে। এটি এড়ানো হবু মায়ের হাতে থাকে না। তবে এরকমটা ঘটলে তার মানসিক অবস্থা উন্নত করতে নিয়মিত কাউন্সেলিং প্রয়োজন।