০৬:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএনও’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এক কলেজ ছাত্রী

print news -

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো .মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এক কলেজছাত্রী। এই ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশও প্রেরণ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

এদিকে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন। বর্তমানে মো. মনজুর হোসেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।

ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন দায়িত্বে থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় ভুক্তভোগীর। পরিচয়ের এক পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হলে এই বিষয়টি ইউএনও মনজুর হোসেনকে অবহিত করেন সেই ছাত্রী। পরে ইউএনও বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে ওই ছাত্রীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে টাঙ্গাইলের কুমুদীনি কলেজের কাছে পাওয়ার হাউজের পিছনে একটি বাসা ভাড়া নেন। বাসা ভাড়া নেয়ার আগে তিনি নিজের সমস্ত তথ্য গোপন রেখে সেখানে দুই মাস সংসার করেন।

এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী তাকে বিয়ে করে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইউএনওকে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি ভারতে যাওয়ার পর বিয়ে করবো বলে ওই ছাত্রীকে আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মনজুর হোসেন তাকে বিয়ে না করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভূক্তভোগী বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেনের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে তার সরকারি বাসভবনে আমাকে নিয়ে যান। সেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন।

তিনি আরও বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তার কথা শুনে বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন কিন্তু সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। বাংলাদেশের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও আমার সাথে এরকম করতে পারবেন এটা আমি কোনোদিন চিন্তা করিনি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি বাসাইল থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করে বলেন, একটি মেয়ে আমার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আপনি একটু দেখেন। আমি ঐ মেয়েটিকে ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসি এবং মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। পরে মেয়েটি আমাকে বলে আমি আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

ভূক্তভোগীর মা বলেন, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছেনা। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা ছিলো বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ডক্টর আতাউল গণি।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

বিয়ানীবাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : অসহায় সাধারন মানুষ

ইউএনও’র বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এক কলেজ ছাত্রী

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৯:২১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ এপ্রিল ২০২২
print news -

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মো .মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন এক কলেজছাত্রী। এই ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে আইনি নোটিশও প্রেরণ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

এদিকে এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন। বর্তমানে মো. মনজুর হোসেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ইউএনও হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ৩৩তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়।

ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন দায়িত্বে থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় ভুক্তভোগীর। পরিচয়ের এক পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হলে এই বিষয়টি ইউএনও মনজুর হোসেনকে অবহিত করেন সেই ছাত্রী। পরে ইউএনও বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে ওই ছাত্রীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে টাঙ্গাইলের কুমুদীনি কলেজের কাছে পাওয়ার হাউজের পিছনে একটি বাসা ভাড়া নেন। বাসা ভাড়া নেয়ার আগে তিনি নিজের সমস্ত তথ্য গোপন রেখে সেখানে দুই মাস সংসার করেন।

এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী তাকে বিয়ে করে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইউএনওকে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি ভারতে যাওয়ার পর বিয়ে করবো বলে ওই ছাত্রীকে আশ্বাস দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মনজুর হোসেন তাকে বিয়ে না করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভূক্তভোগী বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেনের সাথে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে তার সরকারি বাসভবনে আমাকে নিয়ে যান। সেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেন।

তিনি আরও বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তার কথা শুনে বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন কিন্তু সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। বাংলাদেশের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও আমার সাথে এরকম করতে পারবেন এটা আমি কোনোদিন চিন্তা করিনি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভাল সম্পর্ক ছিল। তিনি বাসাইল থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করে বলেন, একটি মেয়ে আমার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আপনি একটু দেখেন। আমি ঐ মেয়েটিকে ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসি এবং মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। পরে মেয়েটি আমাকে বলে আমি আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

ভূক্তভোগীর মা বলেন, ইউএনও মো. মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সাথে প্রতারণা করেছে। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছেনা। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা ছিলো বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ডক্টর আতাউল গণি।