০২:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে আরও পরিবর্তন আসছে

print news -

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে আরও পরিবর্তন আসছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং সংস্থায় এই পরিবর্তন আসবে। মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, এডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) খুব শিগগির প্রত্যাহার করা হবে। এমনকি সদ্য নিয়োগ দেওয়া জেলা প্রশাসকদের বেশ কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তন আনা হবে। তিনি জানান, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কোনো ডিসির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশাসন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়। বাতিল করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়া অধিকাংশ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।

একই সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ কর্মকর্তাদের অবসর প্রদানসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের আমলে যেসব কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছিল, তাদের দ্রুতই দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।

অন্তর্বর্তী সরকারের এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে সচিব পদে পদায়ন শুরু হয়েছে। এখনো যেসব মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পাওয়া সচিবরা রয়েছেন, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পাবেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বঞ্চিত ও উপেক্ষিত কর্মকর্তারা।

তবে যারা গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, তাদের অনেকে রং বদলিয়েছেন। নিজেদের বিএনপি প্রমাণে প্রাণান্তকর চেষ্টায় লিপ্ত তারা। রং বদলানো এসব কর্মকর্তার অধিকাংশই অতিরিক্ত সচিব। সচিব পদে পদোন্নতির প্রত্যাশায় তারা রাতারাতি ভোল পাল্টেছেন। তাদের দৌড়ঝাঁপে বিরক্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।

প্রশাসন ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থাভাজন হওয়ায় প্রথমে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা পরীক্ষিত জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে। এর আগে তিনি সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, নরসিংদী ও ফরিদপুর জেলার ডিসি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক এবং আইডিয়াল কলেজের ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আবু হেনা মোরশেদ জামান এখনো আছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্বে। তার মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও যশোরের সাবেক ডিসি তমিজুল ইসলাম খান। এসব কর্মকর্তা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের দুর্ভাবনায় পরিণত হয়েছেন। তাদের শিগগিরই সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগ নেত্রী সালমা চৌধুরীর স্বামী সোলেমান খান আছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবে। সাবেক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সহযোগী হাবিবুর রহমান রয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক, অতিরিক্তি সচিব হুমায়ুন কবির এই মন্ত্রণালয়ে এখনো রয়েছেন। তিনি আবার অন্তর্ববর্তী সরকারের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের ম্যানেজ করে সচিব হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। মৌলভীবাজারের সাবেক ডিসি ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান এখনো সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগবিরোধীদের নিপীড়নের কুশীলব নাজমুল আহসান এখনো রয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক ও রংপুরের সাবেক ডিসি, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফরিদ আহাম্মদ রয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে।

প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা এসব কর্মকর্তার ব্যাপারে ইতোমধ্যে আপত্তি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ এসব কর্মকর্তাকে তাদের বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।

শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস কাজী নিশাত রসুলের বোন কাজী তুহিন রসুল রয়েছেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নুর চৌধুরী, দিলরুবা শাহীন, যুগ্ম সচিব মেহেদী মাসুদুজ্জামান বহাল তবিয়তে থেকে অর্থ বিভাগে কোন অফিসার আসবেন, কে কোথায় পোস্টিং পাবেন তার কলকাঠি নাড়ছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কাছে। তাই এদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চাপ রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী। নিজের একান্ত সচিব হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ হাসানকে। যিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে তদবির বাণিজ্যে সহায়তা করতেন। এই প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী আকতারুন্নেসাকে পদায়ন করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। এদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে।

গোপালগঞ্জের সাবেক ডিসি মোখলেসুর রহমানের স্ত্রী রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বোন তানজিয়া সালমা রয়েছেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সদস্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব থাকার সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দিবস পালনের জন্য সহকর্মীদের জোর করতেন মো. হাসান মারুফ। দিবস পালন নিয়ে আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন যুগ্ম সচিব মো. হাসান মারুফের বিরুদ্ধে। পদোন্নতি নিয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও এই কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। এদের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের। তারা গত সরকারের অনুগত এসব কর্মকর্তা সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের অবহিত করেছেন। তাই শিগগিরই এসব কর্মকর্তাকে তাদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

তিন দফায় ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগের পর সমালোচনার মুখে ৯ জেলা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শেখ হাসিনা সরকারের সময় বৈষ্যমের শিকার বঞ্চিত কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছিত হন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন না এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। সে জন্য দ্রুতই জনপ্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

বিয়ানীবাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : অসহায় সাধারন মানুষ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে আরও পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৮:১৮:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
print news -

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনে আরও পরিবর্তন আসছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং সংস্থায় এই পরিবর্তন আসবে। মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, এডিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) খুব শিগগির প্রত্যাহার করা হবে। এমনকি সদ্য নিয়োগ দেওয়া জেলা প্রশাসকদের বেশ কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তন আনা হবে। তিনি জানান, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কোনো ডিসির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রশাসন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়। বাতিল করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়া অধিকাংশ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।

একই সঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ কর্মকর্তাদের অবসর প্রদানসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ অধিকাংশ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের আমলে যেসব কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছিল, তাদের দ্রুতই দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।

অন্তর্বর্তী সরকারের এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে সচিব পদে পদায়ন শুরু হয়েছে। এখনো যেসব মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পাওয়া সচিবরা রয়েছেন, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে এসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পাবেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বঞ্চিত ও উপেক্ষিত কর্মকর্তারা।

তবে যারা গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন, তাদের অনেকে রং বদলিয়েছেন। নিজেদের বিএনপি প্রমাণে প্রাণান্তকর চেষ্টায় লিপ্ত তারা। রং বদলানো এসব কর্মকর্তার অধিকাংশই অতিরিক্ত সচিব। সচিব পদে পদোন্নতির প্রত্যাশায় তারা রাতারাতি ভোল পাল্টেছেন। তাদের দৌড়ঝাঁপে বিরক্ত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।

প্রশাসন ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থাভাজন হওয়ায় প্রথমে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা পরীক্ষিত জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে। এর আগে তিনি সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, নরসিংদী ও ফরিদপুর জেলার ডিসি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক এবং আইডিয়াল কলেজের ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা আবু হেনা মোরশেদ জামান এখনো আছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের দায়িত্বে। তার মন্ত্রণালয়ে রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও যশোরের সাবেক ডিসি তমিজুল ইসলাম খান। এসব কর্মকর্তা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের দুর্ভাবনায় পরিণত হয়েছেন। তাদের শিগগিরই সরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগ নেত্রী সালমা চৌধুরীর স্বামী সোলেমান খান আছেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) হিসেবে। সাবেক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সহযোগী হাবিবুর রহমান রয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক, অতিরিক্তি সচিব হুমায়ুন কবির এই মন্ত্রণালয়ে এখনো রয়েছেন। তিনি আবার অন্তর্ববর্তী সরকারের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের ম্যানেজ করে সচিব হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। মৌলভীবাজারের সাবেক ডিসি ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান এখনো সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে। সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগবিরোধীদের নিপীড়নের কুশীলব নাজমুল আহসান এখনো রয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক পরিচালক ও রংপুরের সাবেক ডিসি, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ফরিদ আহাম্মদ রয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে।

প্রশাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা এসব কর্মকর্তার ব্যাপারে ইতোমধ্যে আপত্তি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ এসব কর্মকর্তাকে তাদের বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।

শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস কাজী নিশাত রসুলের বোন কাজী তুহিন রসুল রয়েছেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নুর চৌধুরী, দিলরুবা শাহীন, যুগ্ম সচিব মেহেদী মাসুদুজ্জামান বহাল তবিয়তে থেকে অর্থ বিভাগে কোন অফিসার আসবেন, কে কোথায় পোস্টিং পাবেন তার কলকাঠি নাড়ছেন- এমন অভিযোগ রয়েছে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কাছে। তাই এদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চাপ রয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী। নিজের একান্ত সচিব হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ হাসানকে। যিনি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগকে তদবির বাণিজ্যে সহায়তা করতেন। এই প্রভাব খাটিয়ে তার স্ত্রী আকতারুন্নেসাকে পদায়ন করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। এদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অন্তর্বর্তী সরকারকে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে।

গোপালগঞ্জের সাবেক ডিসি মোখলেসুর রহমানের স্ত্রী রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বোন তানজিয়া সালমা রয়েছেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সদস্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব থাকার সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দিবস পালনের জন্য সহকর্মীদের জোর করতেন মো. হাসান মারুফ। দিবস পালন নিয়ে আরইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন যুগ্ম সচিব মো. হাসান মারুফের বিরুদ্ধে। পদোন্নতি নিয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও এই কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। এদের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের। তারা গত সরকারের অনুগত এসব কর্মকর্তা সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের অবহিত করেছেন। তাই শিগগিরই এসব কর্মকর্তাকে তাদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

তিন দফায় ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগের পর সমালোচনার মুখে ৯ জেলা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শেখ হাসিনা সরকারের সময় বৈষ্যমের শিকার বঞ্চিত কর্মকর্তাদের হাতে লাঞ্ছিত হন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন না এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক। সে জন্য দ্রুতই জনপ্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।