০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে নতুন করে ভাবুন!

print news -

কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান এবং এতে নিয়োজিত কর্মী ‘সিএইচসিপিদের’ নিয়ে নতুন করে ভাবতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এক বেতনে ১৩ বছরে গাধার খাটুনি খাটানোর বিশ্বরেকর্ড করা হয়েছে এদের সঙ্গে! শুরু থেকেই এই ক্লিনিকগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ ক্লিনিকগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় মত্ত ছিল! দেশের সংকটকালে এ ক্লিনিকগুলো থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প পরিচালিত হয়। যেমন করোনাকালে এই ক্লিনিকের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লিনিক থেকে জরুরি সেবা এবং করোনা টিকা প্রদান করেছিল। তখন কমিউনিটি ক্লিনিকের অনেক কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা পৌঁছে দেয়ার নজির স্থাপন করে আসছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৩ হাজারের বেশি । এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনাসেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। করা হয় বিভিন্ন সেবা সম্পর্কিত ক্যাম্প। যেমন- যক্ষা ক্যাম্প, নারীদের জরায়ু পরীক্ষা ক্যাম্প, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ক্যাম্প ইত্যাদি। দেশে বাল্যবিয়ে রোধে এই ক্লিনিকের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন কাজ করছে। গ্রামে অনেক দরিদ্র মানুষ রয়েছে। এদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা একেবারে কম। কমিউনিটি ক্লিনিক এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সহযোগিতা করছে। এ ক্লিনিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি বিপ্লবের নাম। ক্লিনিকে ২৭ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে প্রয়োজন অনুযায়ী দেয়া হয়। নারীদের সন্তান প্রসবের উপকরণ আছে। দেশের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে হাজারের ওপরে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার নজিরও রয়েছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাকর্মী আছেন। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবাদানকারীদের চাকরির অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা বন্ধ হয়নি।2 5 -

বিভিন্ন সময় বরাদ্দকৃত জিনিসপত্র এবং ভাতাগুলো বিভিন্ন লোকের দ্বারা আত্মসাৎ হয়েছে। অধিকারের কথা বলতে গেলে প্রতিনিয়ত কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। উঁচু পর্যায়ের পরিচালকদের দ্বারা কটূক্তির শিকার হয়েছেন সব সময়। বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত অভিযোগ! এই কর্মীদের নিয়মিত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের পরিশ্রমের সফলতার ক্রেডিট ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সাধারণ জনতার ভালোবাসার এই মানুষগুলোকে তামাশার পাত্র হিসেবে বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে বারবার। জোর করে এবং অন্যায়ভাবে অন্যদের দায়িত্ব এবং কাজ চাপিয়ে দিয়ে হয়রানি করা হয় প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন উৎসবে বেতন-ভাতা, বোনাস সময় মতো না দিয়ে নির্যাতনের শিকার করা হয়। সবকিছুর পরও এই ২০২৪-এর আগস্ট মাসে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা অধিকার আদায়ে ঢাকায় জমায়েত হয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। পরিশেষে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিশ্রæতিতে তারা ঘরে ফিরে গিয়ে বুকে আশা নিয়ে দিন-রাত পার করছে। অচিরেই এসব ক্লিনিকের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এখন সময়ের দাবি।

কাজী সুলতানুল আরেফিন : লেখক, ফেনী।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে নতুন করে ভাবুন!

কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে নতুন করে ভাবুন!

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৯:৩৮:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
print news -

কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান এবং এতে নিয়োজিত কর্মী ‘সিএইচসিপিদের’ নিয়ে নতুন করে ভাবতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এক বেতনে ১৩ বছরে গাধার খাটুনি খাটানোর বিশ্বরেকর্ড করা হয়েছে এদের সঙ্গে! শুরু থেকেই এই ক্লিনিকগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ ক্লিনিকগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় মত্ত ছিল! দেশের সংকটকালে এ ক্লিনিকগুলো থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প পরিচালিত হয়। যেমন করোনাকালে এই ক্লিনিকের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লিনিক থেকে জরুরি সেবা এবং করোনা টিকা প্রদান করেছিল। তখন কমিউনিটি ক্লিনিকের অনেক কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা পৌঁছে দেয়ার নজির স্থাপন করে আসছে।

কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৩ হাজারের বেশি । এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনাসেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য শিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়। করা হয় বিভিন্ন সেবা সম্পর্কিত ক্যাম্প। যেমন- যক্ষা ক্যাম্প, নারীদের জরায়ু পরীক্ষা ক্যাম্প, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ক্যাম্প ইত্যাদি। দেশে বাল্যবিয়ে রোধে এই ক্লিনিকের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন কাজ করছে। গ্রামে অনেক দরিদ্র মানুষ রয়েছে। এদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা একেবারে কম। কমিউনিটি ক্লিনিক এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সহযোগিতা করছে। এ ক্লিনিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি বিপ্লবের নাম। ক্লিনিকে ২৭ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে প্রয়োজন অনুযায়ী দেয়া হয়। নারীদের সন্তান প্রসবের উপকরণ আছে। দেশের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে হাজারের ওপরে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার নজিরও রয়েছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাকর্মী আছেন। কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবাদানকারীদের চাকরির অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা বন্ধ হয়নি।2 5 -

বিভিন্ন সময় বরাদ্দকৃত জিনিসপত্র এবং ভাতাগুলো বিভিন্ন লোকের দ্বারা আত্মসাৎ হয়েছে। অধিকারের কথা বলতে গেলে প্রতিনিয়ত কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে। উঁচু পর্যায়ের পরিচালকদের দ্বারা কটূক্তির শিকার হয়েছেন সব সময়। বিগত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রয়েছে শত শত অভিযোগ! এই কর্মীদের নিয়মিত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের পরিশ্রমের সফলতার ক্রেডিট ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সাধারণ জনতার ভালোবাসার এই মানুষগুলোকে তামাশার পাত্র হিসেবে বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে বারবার। জোর করে এবং অন্যায়ভাবে অন্যদের দায়িত্ব এবং কাজ চাপিয়ে দিয়ে হয়রানি করা হয় প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন উৎসবে বেতন-ভাতা, বোনাস সময় মতো না দিয়ে নির্যাতনের শিকার করা হয়। সবকিছুর পরও এই ২০২৪-এর আগস্ট মাসে এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা অধিকার আদায়ে ঢাকায় জমায়েত হয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। পরিশেষে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিশ্রæতিতে তারা ঘরে ফিরে গিয়ে বুকে আশা নিয়ে দিন-রাত পার করছে। অচিরেই এসব ক্লিনিকের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর এখন সময়ের দাবি।

কাজী সুলতানুল আরেফিন : লেখক, ফেনী।