১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবাসীদের ঈদ কাটে আনন্দ বেদনায়

  • জুনেদ হাসান
  • প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৬:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
  • ১৯১ পড়া হয়েছেঃ
print news -

জুনেদ হাসান :: ইতালি::

প্রবাসীদের ঈদ মানে আনন্দ বেদনার মিশ্রিত অশ্রুজলে ভোরের সূর্যোদয়। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে অসংখ্য ঈদ কেটেছে আমার আনন্দ বেদনায়। প্রবাসের ঈদ মানে সবাই একত্রিত হওয়া, যান্ত্রিক জীবনে ভাই-বোনের সাথে আত্মীয়-স্বজনের সাথে একটি দিন অতিবাহিত করা, মজার মজার রান্না করা নতুন কাপড় পরে ছবি তোলা। কিছুটা সময় হলেও নিজেকে ঈদের আনন্দে ডুবিয়ে রাখা।

এখানে কোরবানি দিলেও নিজেকে কাজ করতে হয় না তাই সেই ঝামেলা থেকে বিরত থাকা যায়। প্রতি বছর ঈদের থেকে এবারের ঈদ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পরিবার পাশে থাকা সত্ত্বেও আজ বিষন মিস করছি মা বাবা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবকে।

খোলা মাঠে ঈদের জামাত নেই, ঈদের চিরচেনা কোলাকোলি নেই, বাচ্চাদের নতুন কাপড় কেনার বায়না নেই, মুখরোচক বিভিন্ন খাবার রান্না করার প্রস্তুতি নেই। আনন্দ বেদনার ঈদের নাম হচ্ছে প্রবাসের ঈদ।

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ! এ কথা সবাই মানলেও, প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন ভিন্নরকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটাও কষ্টকর।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা।

ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না- সেমাই খেয়ে যাও। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি।

ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু-একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী বলেন, ঈদ মানে আনন্দ হলেও, প্রবাসীদের কাছে তা কষ্টের। জীবিকার প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছাড়া একাকী ঈদ উদযাপন করতে হয়। সবসময় তো বটেই, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব বেশি মিস করি।

ঈদের নামাজ পড়ে এসে একটা ঘুম দেই, বিকাল হলে বন্ধুদের নিয়ে একটু সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে আসি- এই হলো প্রবাসীদের ঈদ’। এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে বেঁচে থাকার তাগিদে পরিবারের স্বপ্নপূরণে ওই দিনটাও কাজের মধ্য দিয়ে কেটে যায়।
দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি, বেশ খারাপ লাগছে। দেশে যেতে না পারলেও, ফোনে পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা। এইত প্রবাস জীবনে ঈদ। ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব মিস করি। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। পৃথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরনের। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। প্রবাসীদের কষ্টে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ঈদ এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলো।

প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়ালহীন কারাগারে বসবাস। কারও দুঃখ কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। নিজের দুঃখ নিজের অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয়।।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক-হাসনাত আবদুল্লাহ

প্রবাসীদের ঈদ কাটে আনন্দ বেদনায়

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৬:৪৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০২৪
print news -

জুনেদ হাসান :: ইতালি::

প্রবাসীদের ঈদ মানে আনন্দ বেদনার মিশ্রিত অশ্রুজলে ভোরের সূর্যোদয়। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে অসংখ্য ঈদ কেটেছে আমার আনন্দ বেদনায়। প্রবাসের ঈদ মানে সবাই একত্রিত হওয়া, যান্ত্রিক জীবনে ভাই-বোনের সাথে আত্মীয়-স্বজনের সাথে একটি দিন অতিবাহিত করা, মজার মজার রান্না করা নতুন কাপড় পরে ছবি তোলা। কিছুটা সময় হলেও নিজেকে ঈদের আনন্দে ডুবিয়ে রাখা।

এখানে কোরবানি দিলেও নিজেকে কাজ করতে হয় না তাই সেই ঝামেলা থেকে বিরত থাকা যায়। প্রতি বছর ঈদের থেকে এবারের ঈদ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পরিবার পাশে থাকা সত্ত্বেও আজ বিষন মিস করছি মা বাবা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবকে।

খোলা মাঠে ঈদের জামাত নেই, ঈদের চিরচেনা কোলাকোলি নেই, বাচ্চাদের নতুন কাপড় কেনার বায়না নেই, মুখরোচক বিভিন্ন খাবার রান্না করার প্রস্তুতি নেই। আনন্দ বেদনার ঈদের নাম হচ্ছে প্রবাসের ঈদ।

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ! এ কথা সবাই মানলেও, প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন ভিন্নরকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটাও কষ্টকর।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা।

ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না- সেমাই খেয়ে যাও। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি।

ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু-একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রবাসী বলেন, ঈদ মানে আনন্দ হলেও, প্রবাসীদের কাছে তা কষ্টের। জীবিকার প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছাড়া একাকী ঈদ উদযাপন করতে হয়। সবসময় তো বটেই, ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব বেশি মিস করি।

ঈদের নামাজ পড়ে এসে একটা ঘুম দেই, বিকাল হলে বন্ধুদের নিয়ে একটু সময় আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরে আসি- এই হলো প্রবাসীদের ঈদ’। এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে বেঁচে থাকার তাগিদে পরিবারের স্বপ্নপূরণে ওই দিনটাও কাজের মধ্য দিয়ে কেটে যায়।
দেশে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করলেও বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি, বেশ খারাপ লাগছে। দেশে যেতে না পারলেও, ফোনে পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার চেষ্টা। এইত প্রবাস জীবনে ঈদ। ঈদের সময় পরিবারের সবাইকে খুব মিস করি। বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ করে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি। পৃথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরনের। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। প্রবাসীদের কষ্টে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ঈদ এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলো।

প্রবাস জীবন মানে নিষ্ঠুর, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দেয়ালহীন কারাগারে বসবাস। কারও দুঃখ কেউ বুঝতে চেষ্টা করে না। নিজের দুঃখ নিজের অন্তরে রেখে নীরবে কান্না করতে হয়।।