ব্রিটিশ আমল থেকে অবহেলিত বিয়ানীবাজারের ফুলমলিক গ্রাম : উন্নয়ন বঞ্চনায় জনজীবন বিপর্যস্ত
সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার ১ নং আলিনগর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত ফুলমলিক-চন্দ্রগ্রাম সড়কটি আজও উন্নয়নের স্পর্শ থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘ প্রায় আড়াই কিলোমিটার এই রাস্তার মাঝপথে রয়েছে ‘খরতি কাল’ নামের একটি খাল, যেখানে নেই কোনো স্থায়ী সেতু। ফলে ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত এলাকার মানুষ রোজকার চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হচ্ছেন।
খালের উপর অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো বা ছোট নৌকার ওপর নির্ভর করেই প্রতিদিন ফুলমলিক, চন্দ্রগ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক সড়কের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থী, নারী ও রোগীরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এ পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হন। অসুস্থ রোগীকে অনেক সময় মাছ ধরার জালের ‘ফলো’ বা বাঁশের ‘স্ট্যান্ড’ দিয়ে কাঁধে তুলে খাল পার করাতে হয়—যা মানবিকতার জন্য গভীর আঘাতের বিষয়।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে খালের পানি বাড়লে নৌকা ডুবে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে এমন ঘটনাও ঘটে গেছে। অস্থায়ী সাঁকো ভেঙে হাত-পা ভাঙার ঘটনাও অসংখ্য। বৃষ্টির দিনে কাদা মাখা রাস্তায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমনকি কোনো মানুষের মৃত্যু হলে লাশও কাঁধে করে খাল পেরোতে হয়।
২০২০ সালে ১০০ মিটারের নিচের সেতুর চাহিদা তালিকায় এ এলাকার প্রস্তাব পাঠানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। ফলে স্থানীয় মানুষের হতাশা ও ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।
সম্প্রতি এলাকাবাসীর অনুরোধে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না ফুলমলিক এলাকা পরিদর্শন করেন। এলাকাবাসীর দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে তিনি গভীর দুঃখ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। ইউএনও-র উপস্থিতি ও আন্তরিক মনোভাব মানুষের মনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, “বিগত সময়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ভোটের সময় এসে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। বাংলাদেশে লন্ডনখ্যাত বিয়ানীবাজারের এমন অঞ্চল এখনও চলাচলের মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত—এটি চরম বৈষম্যের উদাহরণ।”
এলাকাবাসীর একটাই দাবি:
“স্থায়ী একটি পাকা সেতু এবং ফুলমলিক-চন্দ্রগ্রাম রাস্তার পাকা উন্নয়ন—এই দুটি হলেই বদলে যাবে জীবন, বদলে যাবে কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবিকার চিত্র।”
বহু বছর ধরে অবহেলিত এই জনপদের মানুষের আকুল আবেদন—
সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যেন দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করে এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও দুর্ভোগের অবসান ঘটান।










