বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণে ঐকমত্য, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনে সম্মতি
বিচার বিভাগকে আরও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি যেন আর নির্বিচারে অপব্যবহার না হয়, সে লক্ষ্যে সংবিধানের সংশোধনের মাধ্যমে আইনগত কাঠামো তৈরি করতেও ঐকমত্য গঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (জঅক) দ্বিতীয় দফার নবম দিনের সংলাপ শেষে এসব তথ্য জানান কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
আলী রীয়াজ জানান, সংলাপে বিচারবিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হয় এবং দুটি বিষয়ে অগ্রগতি অর্জিত হয়। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে জনগণের বিচারপ্রাপ্তির অধিকার আরও সহজ হবে এবং আদালত কাঠামো আরও কার্যকর হবে।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির যেকোনো দণ্ড মওকুফ বা বিলম্ব করার ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু গত এক যুগে এ ক্ষমতা বারবার অপব্যবহারের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার অভিযোগে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধানকে একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
প্রস্তাবিত নতুন বিধানে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন পাঠানোর আগে ভুক্তভোগী বা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বৈধ উত্তরসূরির মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। একই সঙ্গে একটি নির্ধারিত আইন অনুযায়ী মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি এ ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর এ ছাড় দেওয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্কারমূলক আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ, নমনীয়তা এবং সম্মতির মাধ্যমে বড় ধরনের অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
আলী রীয়াজ আরও জানান, আলোচনায় জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিষয়টিও ওঠার কথা ছিল। তবে বর্তমানে জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার (এনসিসি) প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত থাকায় বিষয়টি পরবর্তীতে নতুনভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করা হবে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামি সপ্তাহে অন্যান্য সংস্কারমূলক বিষয়ে আলোচনা আরও এগিয়ে যাবে এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি গ্রহণযোগ্য ও টেকসই জাতীয় সনদ প্রণয়নের পথে দেশ এগিয়ে যাবে।











