দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে বেতন বন্ধ: বেতনের দাবিতে ফের আন্দোলনে সিএইচসিপিরা
দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ার প্রতিবাদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট অফিস অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ৬৩৪ জন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। তাদের এই অবস্থান কর্মসূচির ফলে নিজ কার্যালয়ে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, আর কোনো আশ্বাসে আমরা আর ঘরে ফিরছি না।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মীদের হাতে ছিল নানা দাবি-দাওয়া সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। একটিতে লেখা ছিল—‘বেতন চাই, ন্যায্য প্রাপ্য চাই, ১৬ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেই হবে’; ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানেন নাকি, ১৬ মাসের বেতন বাকি’; ‘বেতন না দিলে আন্দোলন, থামবে না থামবে না’।
রাসেল আহমেদ আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইনের ২৪(ঙ) ধারা অনুযায়ী আমাদের পদায়ন ও আর্থিক পাওনা পরিশোধের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অথচ তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত পদায়ন দেওয়া হয়, আমাদের আন্দোলন চলবে।
এদিকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান কর্মীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত জটিলতা বিষয়ে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার। কর্মীদের চাকরি তো আছেই, এবং তাদের নিয়োগ অনুমোদন আছে—এভ্রিথিং আছে। এই কর্মীদের শুধু বেতন দেওয়াটাই বাকি ছিল। আমি এই কর্মীদের বেতনটা দেবে এই মর্মে একটি আদেশ জারি করেছিলাম, কারণ তাদের শুধু এদেরকে বেতন দিয়ে দিলেই হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমি যে অর্ডার করেছিলাম, মন্ত্রণালয় সেটা স্থগিত করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যখন এই সিদ্ধান্তটি স্টোরিং করা হলো, তখন তারা এর কোনো সুস্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করেনি। আমার মনে হয়, যেহেতু বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করছে, সেহেতু আমাদের এখানে আর কিছুই করার নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তাদের কিন্তু সামান্য সংখ্যক কর্মী নয়; এটি ৬ শতাধিক কর্মীর ভবিষ্যৎ ও জীবিকার বিষয়। তবে আমরা যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, মনে হয় না মন্ত্রণালয়ের কেউ এই চিঠি পড়েছে। সমস্যাটা হলো, মন্ত্রণালয়ে আগের সব অফিসার পরিবর্তন হওয়ায় এই কর্মীদের কপালটা পুড়তে যাচ্ছে। কর্মীদেরকে বেতন ভাতে দিয়ে দেওয়া হোক—এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে মন্ত্রণালয় যে জটিলতা তৈরি করছে, এটি কাম্য নয়।
এদিকে, অফিস অবরুদ্ধ থাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় ট্রাস্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কয়েক দফা আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান মেলেনি।
অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
জানাগেছে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতাধীন “Revitalization of Community Health Care Initiatives in Bangladesh (RCHCIB)” শীর্ষক প্রকল্প এবং “Community Based Health Care (CBHC)” শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় কর্মরত ১৩,২৮৯ (তের হাজার দুইশত ঊননব্বই) কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট’-এর সাংগঠনিক কাঠামোতে নেস্থকরা হয়েছে কিন্তু ১৫ জুলাই ২০২৫ হইতে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং পর্যন্ত ৫.৫ মাসের বেতন এখন প্রদার করা হইনি।
দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, দীর্ঘ ৫.৫ মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে এসব কর্মী বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান—প্রতিদিন গ্রামের মানুষের মাতৃসেবা, টিকাদান, সাধারণ চিকিৎসা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শসহ বিভিন্ন কার্যক্রম তারা করে থাকেন। কিন্তু মাসের পর মাস বেতন না পাওয়ায় পরিবারের ভরণ-পোষণ, বাজার-সদাই, সন্তানের লেখাপড়া, ঔষধ ক্রয়সহ নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যয় চালানো তাদের জন্য এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দ্রুত বেতন ভাতা নিরশনে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্ঠি কামনা করছেন।








