৮ দফা দাবীতে খুলনা বিভাগের সিএইচসিপিদের মানববন্ধন
বকেয়া বেতন পরিশোধ, ১২তম গ্রেডে উন্নীতকরণ, চাকুরী প্রবিধানমালা প্রণয়নসহ ৮ দফা দাবীতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে খুলনা বিভাগের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা।
বুধবার বিকেলে শহরের পুরাতন হাসপাতালের সামনে এ কর্মসূচীর আয়োজন করে বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় শাখা।
এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে খুলনা বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দরা অংশ নেয়। সেসময় সংগঠনটির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি তারিকুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান খানসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
সেসময় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা মাঠপর্যায়ে নিরলসভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসলেও এখনো প্রাপ্য বেতন ও পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অবিলম্বে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্নবান জানিয়ে তারা বলেন, দাবি পূরণে বিলম্ব হলে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের বৈষম্য নিরসনে দাবীসমূহ:
১) অবিলম্বে ২০২৩ সালে নিয়োগকৃত কর্মীদের বেতন ভাতা চালু করতে হবে।
২) সকল কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে। (২০২৩ সালে নিয়োগকৃত কর্মীদের ১৫ মাস এবং ২০২৩ সালে নিয়োগকৃত ব্যতীত অন্যান্য সকল কর্মচারীর ৫.৫ মাসের বেতন বকেয়া)
৩) কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার পদের গ্রেড পরিবর্তন করে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।
৪) সকল কর্মচারীদের পে-ফিক্সেশন করতে হবে এবং চাকুরিতে প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে বছর গণনা করে ইনক্রিমেন্টসহ বর্তমান বেতন নির্ধারণ করতে হবে।
৫) কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের চাকুরি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৬) অবিলম্বে সকল কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল চালু করতে হবে।
৭) রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বরাদ্ধ করতে হবে।
৮) কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের ন্যূনতম ১ বছর মেয়াদী ইন সার্ভিস ট্রেনিং চালু করতে হবে।
দাবিগুলোর পক্ষে যুক্তিসমূহ:
১) কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০২৩ সালের নিয়োগকৃত সিএইচসিপিরা দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। তাদের জন্য ট্রাস্টের কোডে বেতন ভাতা বরাদ্ধ থাকলেও কোন কারণে তারা বেতন পাচ্ছে না তার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। এত দীর্ঘসময় ধরে বিনা করাণে বেতন ভাতা বন্ধ রাখা অমানবিক। তাদেরও পরিবার আছে।
২) ২০২৪ সালের জুন মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অপারেশনাল প্লানের মেয়াদ শেষ হয় এবং আমরা ১৫ ডিসেম্বর ট্রাস্টে যোগদান করি। পরবর্তীতে ১৫ই ডিসেম্বর থেকে আমাদের বেতন পরিশোধ করা হলেও অন্তর্বতীকালীন ওই ৫.৫ মাসের বেতন বকেয়া থেকে যায়। কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলেও আজও সেই বেতন আমরা পাইনি।
৩) ২০১১ সালে আমাদের ১৪ তম গ্রেডে নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০১১ সালের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার পদটির নিয়োগবিধিতে যোগ্যতা ছিল উচ্চমাধ্যমিক/সমমান এবং গ্রেড-১৪তম ছিল কিন্তু ২০২৪ সালে নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে নিয়োগ যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক/সমমানের পরিবর্তে স্নাতক/সমমান করা হয় এবং এই মোতাবেক আমাদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার কথা থাকলেও গ্রেড উন্নয়ন না করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আরও ২ স্তর নিচে ১৬ তম গ্রেডে অবনমিত করা হয়। এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা আমরা পাচ্ছি না। দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ আমরা ১৪ তম গ্রেডে বেতন পেয়েছি কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আমরা ১৬ তম স্কেলে বেতন পাচ্ছি। এটি আমাদের সাথে কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণ।
৪) ১৬ তম গ্রেডটি সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দপ্তরগুলোর অফিস সহকারী, কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, নিম্নমান সহকারী, হিসাব সহকারী, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, সহকারী স্টোর কিপার ইত্যাদি পদগুলোর জন্য নির্ধারিত। অপরদিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারগণের কার্য পরিধি উপর্যুক্ত পদের চেয়ে বিস্তর এবং একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারই একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান বলে বিবেচিত। বাংলাদেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানের গ্রেড-১৬ তম নেই। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রেড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের। ২০১১ সালে আমাদের এবং তাদের উভয়েরই বেতন গ্রেড-১৪তম ছিল। অতপর ২০১৪ সালে তাদের ১২ তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছিল এবং ইতোঃমধ্যেই তাদেরকে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
৫) ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা একই বেসিকে ও একই বেতনে চাকুরি করেছি, একটি ইনক্রিমেন্টও পাইনি। ২০২৫ সালে জুলাই মাসে আমরা সর্বপ্রথম ইনক্রিমেন্ট পাই এবং পিছনের ১৪ বছরের ইনক্রিমেন্টগুলোর জন্য কোনো রকম পে-ফিক্সেশন না করেই চলতি বছরের একটি মাত্র ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়। ১৫ বছর চাকুরি করে একটি মাত্র ইনক্রিমেন্ট প্রদান করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে।
৬) গত ফেব্রুয়ারি মাসে কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের চাকুরির প্রবিধানমালার খসড়া করা হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে চাকুরির প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা অবিলম্বে চাকুরির প্রবিধানমালা চাই।
৭) ২০১৮ সালের কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকের সকল কর্মচারী সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল ও পেনশন পাওয়ার যোগ্য হলেও অদ্যাবধি আমাদেরকে সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
৮) উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য রক্ষনাবেক্ষণ ও মেরামত বাবদ একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকে কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকে এমন বাজেট নেই। একটি লাইট বা ফ্যান অচল হয়ে গেলেও আমাদের নিজ অর্থায়নে তা মেরামত অথবা কিনতে হয়। আমরা এই বৈষম্যের অবসান চাই।
৯) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রায় সকল মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ এবং চিকিৎসকদের পদ সহ বিভিন্ন পদে ইন-সার্ভিস ট্রেনিং হয়। স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে এবং কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, যা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে পরিচালিত হয়। বর্তমানে সিএইচসিপিদের জন্য ৩ মাস মেয়াদী বেসিক ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ন্যূনতম ১ বছর মেয়াদী ইন সার্ভিস ট্রেনিং চাই। যেমন: পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের FWV-দের ১৮ মাসের ট্রেনিং ব্যবস্থা রয়েছে।
বক্তারা বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু নিয়মিত বেতন-ভাতা না পেয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপেই এই সংকটের দ্রুত সমাধান সম্ভব।’








