বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

আইনি সুবিধা নিতে

এনআইডি কার্ডে ৫ (পাঁচ) বছর বয়স কমিয়ে অপচেষ্টায় পাখি মৃধা!

মোহাম্মদপুর প্রতিনিধি, মাগুরা। প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫, ৭:৩৩ পিএম
এনআইডি কার্ডে ৫ (পাঁচ) বছর বয়স কমিয়ে অপচেষ্টায় পাখি মৃধা!

মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের গোলাম সারোয়ার ওরফে পাখি মৃধার বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে ৫ বছর বয়স কমিয়ে আপন ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা, সম্পত্তি-সংক্রান্ত মামলায় সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, গোলাম সারোয়ার ওরফে পাখি মৃধার জন্মতারিখ ১০ মার্চ ১৯৬২ (এনআইডি নং: ৯৫৬০৮৪৫০২৭) এবং তার ইমিডিয়েট বড় ভাই লালা মিয়া মৃধার জন্মতারিখ ১৩ অক্টোবর ১৯৬০। এখন গোলাম সারোয়ার পাখি মৃধা এনআইডিতে পাঁচ বছর বয়স কমিয়ে মামলায় জেতার পাঁয়তারা করছেন—এই অভিনব অপচেষ্টার ইতিহাস নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।

সরেজমিনে তদন্তে জানা গেছে, পাখি মৃধা তার এনআইডিতে বয়স পরিবর্তনের জন্য মোহাম্মদপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেন এবং বিষয়টি ত্বরান্বিত করতে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই অনৈতিক কাজে তাকে সহায়তা করছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি)-এর এক কর্মকর্তার আপন ভাই, যিনি সরাসরি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। এই অনৈতিক তদবির ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন স্তরে মারাত্মক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, পাখি মৃধা তার মৃত বড় ভাই ফুল মিয়া মৃধার স্ত্রী ও সন্তানদের জমি আত্মসাতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকৌশল ও হয়রানিমূলক মামলা করেছেন। বসতভিটার দুই শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে গাছগাছালি লাগিয়ে খাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের পূর্বে রোপণ করা ১৫/২০টি আমড়া গাছ তিনি রাতের অন্ধকারে কেটে ফেলে নিজে জায়গা দখল করেন এবং বর্তমানে সেখানে গাছ লাগিয়ে ফলভোগ করছেন।

এই অবস্থার প্রেক্ষিতে তৎকালীন ফুল মিয়া মৃধা স্থানীয় থানায় জিডি করেন এবং তদন্তে পাখি মৃধা দোষী সাব্যস্ত হন। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত শরীফ (বিপি নং-৮৮০৮১৫০৮৯২) জানান, গোলাম সারোয়ার একজন জবরদখলকারী ব্যক্তি। তিনি বলেন, যতদূর শুনেছি তিনি আবার এনআইডি কার্ডে বয়স বাড়িয়ে ভুয়া মামলা করে নিজের পক্ষে অবস্থান তৈরির অপচেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে তার মেজ ভাই লালা মিয়া মৃধা বলেন, “(গোলাম সারোয়ার) একজন জবরদখলকারী। আমি যেখানে বসবাস করছি, সেই বসতভিটা আমাদের তিন ভাইয়ের ছিল। আমার ছোট ভাই আমাকে বসতবাড়ির এই সম্পত্তির তার অংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমার পাশের জমিতে পাকাবাড়ি করে বসবাস শুরু করে, পুকুর কাটে, গাছগাছালি লাগায়, কিন্তু আজও এই বসতবাড়ির জমি লিখে দেয়নি। এমনকি মাঠের জমিও অন্যের কাছে বিক্রি করে আমার মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রি করিয়ে টাকা নিজে নিয়ে নিয়েছে। সত্যি কথা বলতে, বাড়ির জমিতে আমার বড় ভাইয়েরও হক ছিল, কিন্তু সে (পাখি) আমাকে লোভ দেখিয়ে সব করিয়ে এখন কিছুই দিচ্ছে না। আমি এখন মৃত্যুশয্যায়। আমার কিছু হলে তার (পাখির) দায়, কারণ সে আমাদের সর্বশান্ত করেছে। আপনাদের মাধ্যমে এর বিচার চাই।”

তিনি আরও বলেন, “এই বাড়ির জমি কমপক্ষে ২০ বার আমিন/মোহরী এনে মেপে ভাগাভাগি করা হয়েছে। কিন্তু ছোট ভাই গোলাম সারোয়ার ওরফে পাখি মৃধা কোনো কিছুই মানে না। এই জন্য আমি বৃদ্ধ বয়সে মানসিক দুশ্চিন্তায় আছি। আমি মারা গেলে আমার সন্তানরাও এই জমিজমা ফিরে পাবে না। আপনারা এর সঠিক বিচার করুন।”

ভুক্তভোগী পরিবার ইতোমধ্যে ঢাকা নির্বাচন কমিশনের মহাপরিচালক বরাবর গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এই বয়স জালিয়াতি শুধু একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে প্রতারণা নয়, বরং এটি পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি চরম অবমাননা ও এনআইডি অনুবিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে- যা রোধ করা এখন জরুরি।

মোহাম্মদপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, “অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা তদন্ত শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কোনো অনিয়ম করব না। তদন্তে গোলাম সারোয়ার পাখি মৃধার বিপক্ষে রিপোর্ট এসেছে। এরপরও যদি তার পক্ষ থেকে আবার অনিয়মের প্রস্তাব আসে, প্রয়োজনে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পাখি মৃধার মৃত ভাইয়ের স্বজনরা বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে নিরীহভাবে বসবাস করছি। পাখি মৃধা আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ/মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেছেন। এখন তিনি এনআইডিতে বয়স বাড়িয়ে আমাদের বসতভিটা ও চাষি জমির মালিকানা দাবি করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অন্যায়।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাখি মৃধা দীর্ঘদিন ধরে নানা অপকৌশল ও প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, জালিয়াতি, মিথ্যা মামলা ও হুমকির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিতে ৫ বছরের বয়স পরিবর্তনের অপচেষ্টা শুধু প্রতারণা নয়, এটি আইনের অপব্যবহার ও সমাজে অনৈতিকতার জঘন্য দৃষ্টান্ত।” সচেতন মহল এবং এলাকাবাসী অবিলম্বে পাখি মৃধার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন, যাতে এই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড দমন করে গ্রাম্য এলাকায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য: প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও গোলাম সারোয়ার ওরফে পাখি মৃধার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শাহবাগে শিক্ষকদের পুলিশের বাধা, জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৪০ পিএম
শাহবাগে শিক্ষকদের পুলিশের বাধা, জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

প্রাথমিক শিক্ষকদের শাহবাগ অভিমুখী পদযাত্রা করতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। 

শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগে এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে সকালে দশম গ্রেডে বেতনসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো শিক্ষক সেখানে জড়ো হয়ে অবস্থান নেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বিভিন্ন অংশসহ চারটি সংগঠন এ কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো-

১️। সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডে বেতন প্রদান,

২️। চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা দূর করা,

৩️। শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।

অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৩৭ পিএম
অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি

১০ম গ্রেডে বেতনসহ ৩ দফা দাবিতে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।

শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষকদের ৪টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ এ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

বিকালে দাবি আদায়ে শাহবাগে আন্দোলনরতরা পথযাত্রা করলে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের লাঠিপেটায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন।

একইসঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে গরম পানিও ছোড়া হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক রক্তাক্ত হয়েছেন। দু’জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।”

সকাল থেকেই দাবি আদায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগে এলে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। ওই সময় ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ।

শিক্ষকদের অভিযোগ, বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। যদিও পুলিশের দাবি, মিছিল নিয়ে শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়।

পদযাত্রায় বাঁধা দেওয়ার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, “মিছিল নিয়ে শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে শাহবাগে ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। ওই সময় ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।”

সরকারি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ৩ দফা দাবি হলো-

১) ১০ম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকদের বেতন দেয়া।

২) শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।

৩) চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।

সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রতারক চক্রের হুমকি

সাংবাদিককে হত্যা ও মিথ্য মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ৬:৫০ পিএম
সাংবাদিককে হত্যা ও মিথ্য মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে হত্যার হুমকি ও বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ৩ নভেম্বর পুঠিয়া থানায় এবং মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ৬ নভেম্বর রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় দুটি পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।

হুমকি ও অপপ্রচারের শিকার ওই সাংবাদিকের নাম রকিবুল হাসান রকি (২৪)। তিনি পুঠিয়া উপজেলার পালোপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক ‘সময়ের আলো’ ও স্থানীয় দৈনিক ‘সানশাইন’ পত্রিকায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, গত ২৫ অক্টোবর তিনি জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো ও স্থানীয় দৈনিক সানশাইন পত্রিকায় “হঠাৎ ধনী রিকশা চালক আবুল” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। প্রতিবেদনে পুঠিয়া উপজেলার পালোপাড়া সমাজের মোড় এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের সম্পদের উৎস নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আবুল প্রতারণার মাধ্যমে রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকার মৃত ছোলায়মান আলীর ছেলে মোল্লা সাইফ উল মোবারকের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযুক্ত আবুল হোসেন ও ভুক্তভোগী মোল্লা সাইফ উল মোবারক উভয় পক্ষের মধ্যে গত ৫ নভেম্বর স্থানীয় বিএনপি নেতা হান্নানের মুরগির দোকানে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকায় আপস-মীমাংসা হয় বলে জানা গেছে।

তবে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই অভিযুক্ত পক্ষ সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকিকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ছাড়া, দুই পক্ষের আপসনামায় মনগড়া তথ্য সংযোজন করে সাংবাদিকের নাম জড়িয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যার কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, শুধুমাত্র সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতারক আবুল হোসেন ও মোল্লা সাইফ উল মোবারকের এ ঘটনার বিস্তর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দুজনের এ লেনদেনের পিছনে বড় কোনো অপরাধ লুকিয়ে আছে।

সাংবাদিকের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই আবুল হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর থেকে তারা সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকিকে সরাসরি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নানা উপায়ে হুমকি প্রদান করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে হত্যার হুমকি এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকি বলেন, “সংবাদ প্রকাশের পর থেকে আমি নিয়মিত হুমকি পাচ্ছি। আমি ও আবুল একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় বাড়ির আশপাশে অপরিচিত লোকজন নিয়ে আবুল প্রায়ই ঘোরাঘুরি করছে। এতে আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ঘটনায় আমি গত ৩ নভেম্বর পুঠিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই সংবাদটি করেছি- এতে কারও ব্যক্তিগত ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পর যেভাবে আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমি প্রশাসনের কাছে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”

উল্লেখ্য, একটি সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেলে রাজশাহী অফিসে কর্মরত ক্যামেরাপার্সন জানান, নগরীর তালাইমার এলাকার মৃত ছোলায়মান আলীর ছেলে মোল্লা সাইফ উল মোবারক তাঁর আত্মীয়। তাঁর সাথে প্রতারণা করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পুঠিয়ার আবুল হোসেন নামের ওই ব্যক্তি।
স্থানীয় ওই ক্যামেরাপার্সনের দেওয়া তথ্য এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রমাণের ভিত্তিতে সাংবাদিক রকিবুল হাসান রকি বিষয়টি অনুসন্ধান করে সংবাদ প্রকাশ করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর আবুল ও মোল্লা সাইফ উল মোবারক উভয় পক্ষ আপস-মীমাংসায় বসেন এবং লিখিত মীমাংসাপত্রে তারা বিষয়টিকে ব্যবসায়িক লেনদেন হিসেবে উল্লেখ করেন।

এর আগে, সাংবাদিককের আত্মীয় পরিচয়দানকারী ব্যক্তি অভিযোগ করেন, দুটি হত্যা মামলায় ভয় দেখিয়ে আবুল তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছিলেন। ওই ক্যামেরাপার্সন এ প্রতারণা চক্রের সদস্য কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়াও প্রতারক আবুল সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওই ভিডিও ফুটেজে অসংলগ্ন কথা বার্তা বলেছে। তার কথায় পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে তিনি মিথ্যা বলছেন। এখানে ওই ক্যামেরাপারসন ১৪ লাখ টাকা আপোষ মিমাংসায় গিয়ে প্রমাণ করেন তিনি পূর্ব থেকে এদের সাথে জড়িত।
এ ঘটনায় রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিককে ফাঁসানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নাই। সব হুমকি ধামকি প্রতিহত করা হবে। তবে প্রকাশিত সংবাদটিসহ ভুক্তভোগী মোল্লা সাইফ উল মোবারকসহ ওই ক্যামেরাপার্সনের তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আবুলকে কেন অর্ধ কোটি টাকা মোল্লা সাইফ দিলো? পরে কেন উভয় পক্ষ ১৪ লাখ টাকায় আপোষ মিমাংসা হলো? এ টাকা কিসের লেনদেন, এসব অ-মিমাংসীত প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন। সেই সাথে তাদের উভয়ের আয়ের উৎস খোঁজার জন্য দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এঘটনার বিষয়ে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, অভিযোগসহ বিষয়গুলো পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে

error: এই ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট কপি করা যাবে না।