শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২
শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জে এইচএসসি ফলাফল: উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সংমিশ্রণ

আতাউর রহমান প্রকাশিত: শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ২:৫৩ পিএম
বিয়ানীবাজার–গোলাপগঞ্জে এইচএসসি ফলাফল: উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সংমিশ্রণ

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট জেলায় দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন বিপর্যয়। সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সামগ্রিকভাবে পাসের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫১.৮৬ শতাংশ—অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর, ২০২৫) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বোর্ড কার্যালয়ে বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করেন।

ফলাফলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাশের হার নিম্নমুখী হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে কিছু মেধাবী শিক্ষার্থীর সাফল্যে আশার আলোও জ্বলছে।

বিয়ানীবাজারের ফলাফল চিত্র

বিয়ানীবাজার উপজেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ২,৩৭৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১,৬৮৩ জন, ফলে পাশের হার ৭০.৮১ শতাংশ। উপজেলায় এ বছর একমাত্র বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ২৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ অর্জন করেছে—যা পুরো উপজেলার মধ্যে সর্বাধিক। যদিও সামগ্রিকভাবে এ হার গত বছরের তুলনায় কিছুটা নিম্নমুখী।

উপজেলার সাতটি কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ পাসের হার ৭৭.১৯ শতাংশ, অর্জন করেছে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ। অন্যদিকে, বৈরাগীবাজার আইডিয়াল কলেজের পাসের হার ৪৯.৬৮ শতাংশ, আছিরগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২৯.৩৩ শতাংশ, দুবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২৭.৯৯ শতাংশ, এবং সৈয়দ নবীব আলী কলেজে ২৬.৩২ শতাংশ।

সবচেয়ে দুর্বল ফলাফল করেছে বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজ (২২.৫৭%) এবং কুড়ারবাজার কলেজ (১৪.২৯%)।
পরিসংখ্যান বলছে—বিয়ানীবাজারের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই মানসম্মত শিক্ষাদানে পিছিয়ে পড়েছে।

আদর্শ মহিলা কলেজের ফলাফল বিশ্লেষণ

বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের ফলাফল এ বছর বিশেষভাবে হতাশাজনক। বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে: কৃতকার্য ১৪ জন, অকৃতকার্য ১৩৫ জন।মানবিক বিভাগে: কৃতকার্য ৭৬ জন, অকৃতকার্য ১৯০ জন। বিজ্ঞান বিভাগে: কৃতকার্য ৫ জন, অকৃতকার্য ৭ জন। মোট ৪২৭ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ৯৫ জন—যা পাশের হার মাত্র ২২.২৪ শতাংশ।
এই ফলাফল কলেজটির পাঠদান, শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক তদারকির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় মহলে।

গোলাপগঞ্জের ফলাফল চিত্র

গোলাপগঞ্জ উপজেলার মোট ১৭টি কলেজ থেকে ২,৬৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১,৯৬০ জন, ফলে পাশের হার ৭৩.০১ শতাংশ। উপজেলায় ৪৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ অর্জন করেছে।

সর্বোচ্চ ফলাফল করেছে সরকারি এম. সি. একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যেখানে পাশের হার ৮৯.৪৭ শতাংশ এবং ৩৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাণাপিং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, পাশের হার ৮৯.১৭ শতাংশ।

অন্যদিকে, ভাদেশ্বর কলেজে পাসের হার মাত্র ১৩ শতাংশ—যা উপজেলার সর্বনিম্ন। বিপরীতে ভাদেশ্বর মহিলা ডিগ্রি কলেজের পাসের হার ৮৫ শতাংশ, যা প্রশংসনীয়।

আরও উল্লেখযোগ্য কিছু প্রতিষ্ঠানের পাসের হার — ঢাকা দক্ষিণ সরকারি কলেজ: ৩০.১৩%, ঢাকা দক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ: ৮০.৭৮%, ঢাকা দক্ষিণ বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ: ৬০%, ডা. সৈয়দ মকবুল হোসেন কলেজ: ৬৯.৪৯%, আল-আমিন মহিলা কলেজ: ৪৪.৯০%, রণখেলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ: ৮২%। এ উপজেলায় ৭টি কলেজে পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, জিপিএ–৫ প্রাপ্তির হারও গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

উভয় উপজেলার সামগ্রিক তুলনা

বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ—দুই উপজেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫,০৬০ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩,৬৪৩ জন, ফলে গড় পাশের হার দাঁড়িয়েছে ৭১.৯৯ শতাংশ।
উভয় উপজেলায় মোট ৬৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ অর্জন করেছে। তন্মধ্যে বিয়ানীবাজারে ২৬ জন, গোলাপগঞ্জে ৪৩ জন।

তুলনামূলকভাবে গোলাপগঞ্জের ফলাফল কিছুটা ভালো হলেও, উভয় উপজেলাতেই শিক্ষা মানে সার্বিক উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে বিয়ানীবাজারে ফলাফলের নিম্নগতি একটি গভীর শিক্ষা সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ফলাফল বিপর্যয়ের সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণ

ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিক্ষক সংকট, পাঠদানের মানহীনতা, এবং একাডেমিক পরিবেশের দুর্বলতা এ বিপর্যয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। অনেক শিক্ষার্থী বছরের বড় অংশজুড়ে অনুপস্থিত ছিল, পরীক্ষার আগে তড়িঘড়ি করে প্রস্তুতি নেওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, কলেজগুলোতে ফল বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি না থাকাও মানোন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে।

এছাড়া করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার ধারাবাহিকতা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে না পারাও একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

শিক্ষা মানের সংকটের প্রতিচ্ছবি

সিলেট বোর্ডের এইচএসসি ফলাফল ২০২৫ শুধুমাত্র পরিসংখ্যানগত ব্যর্থতা নয়—এটি শিক্ষা মানের অবনতির এক বাস্তব চিত্র। গোলাপগঞ্জ উপজেলায় কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও বিয়ানীবাজারের ফলাফল শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে।

অতএব, যৌথ উদ্যোগ, প্রশাসনিক তদারকি ও শিক্ষক–শিক্ষার্থীর দায়বদ্ধতা—এই তিনটিই শিক্ষা বিপর্যয় থেকে উত্তরণের মূল চাবিকাঠি।

আশু পদক্ষেপের প্রয়োজন

শিক্ষাবিদদের মতে, এ অবস্থায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ফলাফল বিশ্লেষণ সভা আয়োজন, দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়ক ক্লাস চালু, এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক মনিটরিং জোরদার করা জরুরি। পাশাপাশি অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যচর্চায় যুক্ত করা গেলে এ বিপর্যয় থেকে উত্তরণ সম্ভব।
একই সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রশাসনের মাধ্যমে কলেজগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি, মডেল ক্লাস চালু, এবং ফলাফল উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গি : পুনরুত্থানের প্রত্যাশা

বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ—দুই উপজেলার শিক্ষা বাস্তবতা প্রায় অভিন্ন। সামগ্রিকভাবে এ দুই অঞ্চলে শিক্ষার মান রক্ষা ও উন্নয়নে শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠপদ্ধতি চালু করাই হতে পারে পুনরুত্থানের পথ।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষাবিদরা আশাবাদী—সমন্বিত উদ্যোগ ও আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আগামী বছরেই এ বিপর্যয় কাটিয়ে সিলেট অঞ্চলের শিক্ষায় নতুন আলোর সূচনা হবে।

একই সঙ্গে অভিভাবকদেরও সন্তানের শিক্ষা তদারকিতে আরও সক্রিয় হতে হবে। শিক্ষা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সমন্বিত মানোন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে, আগামী বছরের ফলাফল অনেক বেশি ইতিবাচক হবে—এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।

নামাজে আসে না সভাপতি-সেক্রেটারি, সালাম না দেওয়ায় ইমামকে চাকরিচ্যুত

মশিউর রহমান রাজশাহী ব্যুরো: প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:৪২ পিএম
নামাজে আসে না সভাপতি-সেক্রেটারি, সালাম না দেওয়ায় ইমামকে চাকরিচ্যুত

রাজশাহীতে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে সালাম না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ইমামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি এবং কোষাধ্যক্ষ ওই মসজিদে নামাজ পড়তেই যান না বলেও মুসল্লিদের অভিযোগ। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ইমামের পক্ষে রাজপথে বিক্ষোভ মানববন্ধন করেছেন এলাকার মুসল্লিরা।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর রেলগেট এলাকায় গোরহাঙ্গা জামে মসজিদের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে মসজিদের মুসল্লি আবদুল ওয়াহিদ বলেন, আল্লাহর ঘর মসজিদ নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে, প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করেছে। আমি মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। ৫ আগস্টের পর মসজিদে আমরা একটি আহবায়ক কমিটি করি। আমরা চেয়েছিলাম কমিটিতে নামাজিরা আসুক। ৩ মাস পর আহবায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। তবে এরপর দখলবাজরা আসে, যারা নামাজ পড়ে না তাদের নিয়ে কমিটি করে ও আধিপত্য তৈরি করে।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ গত শুক্রবারে দেখি আরেকজন খতিব এনে বলে, আমাদের ইমামকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ ইমামের কোনো দোষই নাই। তিনি সবদিক থেকেই ভাল। অনেক ভাল খুতবা দেন। কিন্তু তার অপমান আমরা মেনে নেব না। আল্লাহর ঘর রক্ষার জন্য যা করা লাগে আমরা করবো।

মসজিদের স্থানীয় মুসল্লিরা বলেন, সভাপতি, সেক্রেটারি ও ক্যাশিয়ার শুধু শুক্রবার জুমার নামাজের পর আসে আর টাকা গুণে নিয়ে চলে যায়। হঠাৎ খতিব চেঞ্জ দেখতে পাই গত শুক্রবারে। মুসল্লিরা কারণ জানতে চাইলে গালাগালি করা হয় ও ধস্তাধস্তি হয়। ১৬ লক্ষ টাকা আমরা রেখেছিলাম, হিসাবও পাইনি। আয়-ব্যয়ের কিছু হিসাব দেখি না। কমিটির কয়েকজন আসে শুক্রবারে, তাও জুমার নামাজ অন্য জায়গায় পড়ে এসে টাকা নিয়ে চলে যায়। এছাড়াও ইমামের ঈমান আকিদা সব ভাল, তার কোনো দোষ নাই। শুধু শুনেছি, তিনি নাকি কমিটির কাকে সালাম দেন না, এজন্য তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যা অন্যায়! কমিটির কয়েকজন তো ৫ ওয়াক্ত নামাজেই আসেন না। এমনকি শুক্রবার জুমার নামাজ অন্য মসজিদে পড়ে এখানে আসেন। তারা বলছে, ইমাম নাকি তাদের সালাম দেন না। এটা মিথ্যা ও অন্যায় অভিযোগ। আমাদের উচিত ইমামকে সালাম ও সম্মান দেওয়া। ইমাম আমাদের সালাম দিতে বাধ্য নন।

কমিটির সভাপতি দাবি করে ডা. এনামুল হক নামে এক মুসল্লি মানববন্ধনে বলেন, ওরা টাকা চুরি করত, ইমামকে টাকা দিত না। ঈদের নামাজ বিভিন্ন সময়ে ইমামকে টাকা দেওয়া হয় না। রমজানে সারা মাস নামাজ পড়িয়েছে ইমাম, কিন্তু টাকা দেয়নি। আমাদের হুমকি দেয় হিসাব চাইলে। ২৫-৩০ জন লোক এনে উল্টাপাল্টা বকে। এখনো আমি সভাপতি আছি। বিগত কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো। নতুন কমিটি ৩ মাসের ভেতর নতুন দেওয়া হবে। আমরা ইমামের কোনো দোষ পাইনি

শরীরে ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয় যেসব লক্ষণ

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৫ পিএম
শরীরে ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয় যেসব লক্ষণ

ক্যানসারের সাধারণ কিছু লক্ষণ যা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে ত্বকের পরিবর্তন। যেমন পিণ্ড বা ফোঁড়া যা সহজে রক্তপাত হয়, ক্ষত যা নিরাময় হয় না এবং তিলের আকার বা রঙে পরিবর্তন। এ ছাড়া অস্বাভাবিক ক্লান্তি, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, ওজন হ্রাস এবং খাবার বা পান চিবাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর মরণব্যাধি ক্যানসার শরীরের এক কোষ থেকে অন্য কোষে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করা না গেলেও তা মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আর শরীরে ক্যানসার বাসা বাঁধলে নারী-পুরুষ সবার মধ্যেই সাধারণ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, শরীরে ক্যানসারের বাসা বাঁধলে যে লক্ষণ দেখা যায়-

ওজন কম

ক্যানসারে আক্রান্তদের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে-প্রাথমিক অবস্থায় ওজন কমতে শুরু করবে। তাই কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা কিংবা ডায়েট না করেও যদি আপনার ক্রমাগত ওজন কমতে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর আপনার শরীরে ক্লান্তি ভর করবে। বিভিন্ন কাজের পর ক্লান্তি আসতেই পারে। কিন্তু কাজ না করেও সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সে জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কারণ কোলন বা পেটের ক্যানসার থেকে রক্তক্ষয় হতে পারে। এর ফলে শরীর আরও দুর্বল হয়ে যায়।

শরীর ব্যথা

যদি হাড়ের ক্যানসার হয়, তাহলে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। মস্তিষ্কে টিউমার হলে মাথাব্যথার কারণ হয়, যা কয়েক দিন ধরে স্থায়ী হতে থাকে এবং চিকিৎসার মাধ্যমেও মাথাব্যথা ভালো হয় না। তাই একই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পালাক্রমে ব্যথা অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হাড়ের ব্যথার সঙ্গে আপনার জ্বরও দেখা দেয়। তিন দিনের বেশি জ্বর স্থায়ী হলে বড় বিপদ। লিম্ফোমার মতো কিছু রক্তের ক্যানসারের কারণে কয়েক দিন কিংবা সপ্তাহ পর্যন্ত জ্বর থাকতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কাশি

ফুসফুস ক্যানসারের একটি বড় লক্ষণ হলো কাশি। দীর্ঘদিন ধরে কাশি থাকা মানে (ভয়েস বক্স বা থাইরয়েড গ্রন্থি) ক্যানসারেরও লক্ষণ হতে পারে।

রক্তক্ষরণ

যদি দেখেন, পায়খানার সঙ্গে আপনার নিয়মিত রক্ত পড়ছে, তাহলে কোলন বা মলদ্বার ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। এতে মূত্রনালিতে টিউমার হলে প্রস্রাবের সঙ্গেও রক্ত পড়তে পারে। এ ছাড়া যখন আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্তকণিকা থাকে না, তখনই রক্তশূন্যতা হয়। অস্থিমজ্জাতে তৈরি হয় রক্তকণিকা। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা এবং একাধিক মেলোমার মতো ক্যানসারগুলো আপনার মজ্জার ক্ষতি করে থাকে। আর পুরুষের মধ্যে সর্বাধিক সাধারণ ক্যানসার হলো প্রোস্টেট, ফুসফুস এবং কলোরেক্টাল। প্রস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রস্রাব করতে অসুবিধা হতে পারে। নিয়মিত যদি প্রস্রাবে অসুবিধা কিংবা মূত্রের সঙ্গে রক্ত দেখা যায় এবং ব্যথা অনুভব করলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

শরীরের ত্বকে ক্যানসার

আপনার চেহারা এমনকি ত্বকেও ক্যানসারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। বিশেষ করে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্তদের শরীরে অস্বাভাবিকতা বা নতুন তিল, মোলস বা বাদামি, কালচে স্পট দেখা দিতে পারে। হলুদ বা লাল স্পটসহ চুলকানি দেখা দিলে বা ফুসকুড়ি থাকলে তা লিভার, ডিম্বাশয় বা কিডনি ক্যানসার বা লিম্ফোমার লক্ষণ হতে পারে। আর মুখে দীর্ঘদিন ধরে ঘা থাকলে তা ওরাল ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। ধূমপান, তামাক চিবানো বা প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পান করলেও ওরাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

এ ছাড়া অণ্ডকোষে ব্যথা হওয়ার লক্ষণ হতে পারে টেস্টিকুলার ক্যানসার। অন্যদিকে নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন স্তন, ফুসফুস এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসারে। জরায়ু, এন্ডোমেট্রিয়াম, যোনি বা ভলভা ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়ে থাকেন। যোনি দিয়ে রক্তপাত বা স্রাব বের হওয়া, ক্ষুধামন্দা, পেটে ব্যথা বা ফোলাভাব, স্তনের পরিবর্তন বা ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিদিন চিনি খেলে কী হয়?

অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৩ পিএম
প্রতিদিন চিনি খেলে কী হয়?

চিনি যুক্ত মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ কম-বেশি আমাদের সবারই থাকে। এদিকে প্রতিদিন চিনি খাওয়ার অভ্যাস শরীরের কার্যকারিতার ওপর চুপচাপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। শক্তির পরিবর্তন থেকে শুরু করে হজম এবং ত্বকের পরিবর্তন পর্যন্ত, প্রতিদিন চিনি গ্রহণ ধীরে ধীরে ছোট কিন্তু লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। তার মানে চিনি যে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং এটি নিয়মিত খেলে শরীরে কীভাবে তা প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো। আপনি যদি মিষ্টির প্রতি আগ্রহী হন এবং কখনো ভেবে দেখে থাকেন যে এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনি খেলে কী হয়, তাহলে আপনার সে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনি খেলে শরীরে কী ঘটে-

শক্তির স্তর ওঠানামা করতে শুরু করে

চিনি দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্রতিদিন খাওয়ার হলে এটি হঠাৎ উচ্চ মাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং তারপর শক্তির ক্র্যাশ হতে পারে, যার ফলে আপনি ক্লান্ত বা খিটখিটে বোধ করতে পারেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত মেজাজের ওপর চিনির প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ, বিশেষ করে চিনি, খাওয়ার ৬০ মিনিটের মধ্যে মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং গ্রহণের ৩০ মিনিটের মধ্যে ক্লান্তি বৃদ্ধি করে। এই উত্থান-পতন ঘটে, কারণ চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি এবং হ্রাস করে।

মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি

প্রতিদিন চিনি খাওয়ার ফলে আপনার শরীর আরও বেশি চিনি খেতে চাইতে পারে। ২০১৬ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, মিষ্টি স্বাদ মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণকে ট্রিগার করে যা আনন্দ এবং পুরষ্কারের সঙ্গেও সম্পর্কিত রাসায়নিক। এটি এমন একটি চক্র তৈরি করতে পারে যেখানে প্রতিবেলা খাবারের পরে বা চাপের সময় মিষ্টি কিছু খেতে তীব্র ইচ্ছা হতে পারে। এক মাস ধরে চিনি খাওয়ার অভ্যাস হলে আপনার জিহ্বা অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করতে পারে

প্রতিদিন চিনি খাওয়ার অভ্যাস ধীরে ধীরে ত্বকের গঠন এবং উজ্জ্বলতাকে প্রভাবিত করে। ২০২২ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত চিনি ত্বকের প্রোটিনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে স্থিতিস্থাপকতা এবং হাইড্রেশন হ্রাস করে, যার ফলে অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড-প্রোডাক্টস (অএঊং) গঠনের কারণে ত্বককে নিস্তেজ বা ক্লান্ত দেখায়। যদি আপনার চিনির পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেশি থাকে তবে আপনি মাঝে মাঝে ব্রেকআউটও অনুভব করতে পারেন।

পেট ফুলে যেতে পারে

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে অন্ত্রে গাঁজন হতে থাকে, যা ফোলাভাব বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারেও ফাইবারের অভাব থাকে, যা হজমকে ধীর করে দেয়। আপনি যদি এক মাস ধরে প্রতিদিন চিনিযুক্ত খাবার খান, তাহলে লক্ষ্য করবেন যে পেট ভারী হয়ে যাচ্ছে বা হজম অনিয়মিত হচ্ছে। হাইড্রেটেড থাকা এবং দই বা গাঁজানো শাক-সবজির মতো প্রোবায়োটিক খাবার খেলে এই প্রভাবগুলো মোকাবিলা করা এবং অন্ত্রে সুস্থ ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হতে পারে।

ক্ষুধা এবং মেজাজে পরিবর্তন ঘটে

২০১৯ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন চিনি খেলে তা ক্ষুধা বা মেজাজকে সূক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করতে পারে। চিনি থেকে দ্রুত শক্তির উত্থানের পরে বেশিরভাগ সময়েই হঠাৎ করে হ্রাস পায়, যা আপনাকে খিটখিটে, অস্থির বা তাড়াতাড়ি ক্ষুধার্ত বোধ করাতে পারে। এক মাস ধরে চিনি খেলে তা আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং মেজাজের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

error: এই ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট কপি করা যাবে না।