রাজশাহীতে মাদক সম্রাট ডলার এখন ‘রাজনৈতিক নেতা’!
জুলাই গণহত্যায় আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা রাজশাহী মহানগরীর কুখ্যাত মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত ডলার রহমান এখন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর রাজশাহী মহানগর শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সংগঠক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তবুও তাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে—ডলার রহমান এনসিপির নগর নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে সংগঠনে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি মাদক ব্যবসার লাভের টাকায় শ্রমিক উইংয়ের প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলেও জানান সেখেরচক এলাকাবাসী।
আগামী ১৭ অক্টোবর শ্রমিক উইংয়ের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু দুর্গাপূজার সময় থেকেই ডলার রহমান নিজ নামে ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন—যা সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নিয়মের পরিপন্থী বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচানি মাঠ এলাকায় ডলারের নিজ বাড়িকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত পলাতক সন্ত্রাসী আলতু ডলারের পেছনে সক্রিয় মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে। আলতুর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, পতিতাবৃত্তি ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবেও আলতুর নাম উঠে আসে।
এছাড়া স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী এক নেতা—আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এবং বোয়ালিয়া থানার সাবেক সেকেন্ড অফিসার ইফতেখার এর সঙ্গে ডলারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অতীতে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরও ডলার রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়ে যান বলেও দাবি স্থানীয়দের।
এলাকাবাসী ও সচেতন মহল বলছেন, ডলার রহমানের মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাজনৈতিক সংগঠনে পদ দেওয়া মানে অপরাধীদেরই পুরস্কৃত করা।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এই ডলার একসময় শাহমখদুম কলেজের পাশের গলিতে গাঁজা আর ইয়াবা বিক্রি করত, এখন সে জনগণের প্রতিনিধি! তাহলে তো রাজনীতি মানে এখন অপরাধীদের আশ্রয়।”
ডলার রহমানের নিয়োগ নিয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় বা মহানগর নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেখা যায়, নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পোস্ট দেন, যেখানে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা আবির হোসেন রুদ্র অভিনন্দন মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর এনসিপির আহ্বায়ক মোবাস্বের আলম বলেন, “ডলারের মাদক ব্যবসা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি মাদকের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এনসিপির রাজশাহী মহানগর শ্রমিক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবির হাসনাত রুদ্র বলেন, “ডলারের মাদক ব্যবসার বিষয়ে আমরা শুনেছি, তবে এগুলো আওয়ামী লীগের লোকজন ছড়াচ্ছে বলে জেনেছি। কোনো তথ্য-প্রমাণ থাকলে আমাদের দিন, আমরা তা কেন্দ্রের কাছে প্রেরণ করব।”
ডলারের বিরুদ্ধে ৫ আগষ্টের পর বোয়ালিয়া থানায় মামলা ও এলাকাবাসীর মানববন্ধনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এসব বিষয়ে আমরা অবগত নই। দলের সদস্য নিয়োগের কিছু নিয়মনীতি আছে, যাচাই-বাছাই করেন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রমজান সাহেব। তিনি বিষয়টি দেখছেন।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এনসিপির কেন্দ্রীয় শ্রমিক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত রমজান সাহেব বলেন, “তদন্ত টিম বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিয়েছে। তবে কোনো ভুলভ্রান্তি বা নতুন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে আমরা তা কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অপরাধীদের রাজনীতিতে আশ্রয় দেওয়া সমাজের জন্য ভয়াবহ সংকেত। একজন মাদক ব্যবসায়ী যখন শ্রমিক নেতার আসনে বসে, তখন আইন-শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার প্রশ্নে পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।
তাদের মতে, অপরাধ থেকে মুক্ত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা না হলে জনগণের আস্থা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিই ফিরবে না।











