দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন ঘোষণার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল।। এমনকি পরবর্তীতে এমন কোনও আদেশ আর কখনও দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। তবে দেশটির জনগণ তাকে ক্ষমা করতে পারেনি। সামরিক আইন জারির পর মঙ্গলবার রাতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তা দ্রুত বাতিল করলেও অভিশংসনের মুখোমুখি হয়েছেন ইউন। এর আগেও, বহুবার দক্ষিণ কোরিয়ায় এই আইন জারি হয়েছে এবং এ নিয়ে জনগণের মনে দীর্ঘদিনের ট্রমা রয়েছে। দেশটিতে সামরিক আইন জারি ও জণগণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রেসিডেন্টের ওই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তার শাসকদল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি)-এর নেতা হান ডং-হুন বলেছেন, ইউনের পক্ষে আর স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। ‘তার আগাম পদত্যাগ অনিবার্য’।
দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন ভাষণে ক্ষমা চেয়ে ইউন বলেছেন ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং শোকাহত মানুষদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সামরিক আইন ঘোষণার বিষয়ে আমি কোনও আইনি বা রাজনৈতিক দায় এড়িয়ে যাব না।’
সামরিক আইন ঘোষণার পর জাতির উদ্দেশে তার প্রথম ভাষণে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন বলে ভেবেছিলেন অনেকে। তবে তাদের হতাশ করে দিয়ে এমনটা কিছুরই ইঙ্গিত তিনি দেননি। পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার দায়িত্ব তার শাসক দলের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও অভিশংসনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি ইউন।
শনিবার ইউনের অভিশংসনের জন্য দাবি তোলে বিরোধী দল। এটি পাশ হতে পার্লামেন্টের ৩০০ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। এদিকে, পার্লামেন্টে ইউনের দলের মোট ১০৮ সদস্য রয়েছেন। অর্থাৎ তার অভিশংসনের জন্য ইউনের দলের অন্তত আটজনকে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হবে।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমা চাওয়া নিয়ে জণগণের প্রতিক্রিয়া
শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ইউনের মন্তব্যে হতাশ হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিরোধী নেতা লি জে-মিউং। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় জনসাধারণের ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং মানুষ ভাবতে শুরু করবে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
লি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন তিনি। তার মতে, ‘বর্তমানে প্রেসিডেন্টের অস্তিত্বই এখন দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।’
শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, ইউনের কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাধারণ মানুষও। সিউলের নামদেমুন বাজারে একটি সি-ফুড খাবারের দোকানি ৫০ বছর বয়সী ইয়াং সুনসিল বিবিসিকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যখন সামরিক আইন ঘোষণা করছিলেন তিনি তখন ভয় পেয়েছেন এবং বিষয়টি অবিশ্বাস্য লাগছিল।
তিনি বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউনের ওপর আমি আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। তাকে আমি আর আমাদের প্রেসিডেন্ট মনে করি না। আমাদের শেষ অবধি লড়াই করতে হবে। তাকে আমরা প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে দিতে পারি না।’
একই বাজারে ক্রেতা হান জুংমো বলেন, ইউনের শুধু ক্ষমা চাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। ‘তাকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে কিংবা পদত্যাগে রাজি না হলে তাকে অভিশংসিত হতে হবে’।
তার মতে, প্রেসিডেন্ট জনগণের আস্থা নষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি যদি জোর করে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে চান তবে সেটি হবে খুবই হতাশাজনক। কারণ আমি মনে করি, শুধু সামরিক আইন ঘোষণাই এই প্রেসিডেন্টের একমাত্র অপকর্ম নয়।’
মঙ্গলবার গভীর রাতে প্রেসিডেন্ট ইউনের সামরিক আইন ঘোষণা করার পর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়া। তিনি তখন ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ ও উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে শিগগিরই এটি পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাহ্যিক কোনও হুমকির কারণে নয় বরং, নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ইউনের ডিক্রি বাতিলের জন্য পার্লামেন্টে উপস্থিত হতে কয়েকজন আইনপ্রণেতা নিরাপত্তা বাহিনীকে পাশ কাটিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপর দিয়ে লাফিয়ে পার হন।
পার্লামেন্ট সদস্যরা যখন ভোট দিয়ে এই ঘোষণা প্রত্যাহার করেন তার ছয় ঘণ্টা পর ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নেন ইউন। তবে তিনি দ্বিতীয় ডিক্রি জারির চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন অনেকে। কয়েকজন আইনপ্রণেতা তো ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সামনে আগে থেকেই ঘোষণা বাতিলের প্রস্তুতি নিয়ে ছিলেন।
সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই দেশে জনপ্রিয়তার রেটিংয়ে পিছিয়ে ছিলেন ইউন। দুর্নীতির অভিযোগ ও একটি বিরোধী দল পরিচালিত আইনসভা তাকে একজন অসমর্থ নেতায় পরিণত করেছিল।
কোহ জে-হাক এখনও স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন, তার চোখের সামনে সেনারা কতোটা নির্মমভাবে একদল তরুণীকে গুলি করেছিল।
সময়টি ছিল ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাস। তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট সিংম্যান রি-এর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা। তখন একটি সরকারি ভবনে কাজ করতেন ৮৭ বছর বয়সী কোহ হে হাক। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাত চলতে দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একত্রে ভবনটির সামনে জড়ো হয়েছিল। আর তখনই তাদের ওপর গুলি চালানো হয়।’
ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই দেশটিতে সামরিক আইন জারি করা হয়।
বর্তমানে এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় দক্ষিণ কোরিয়াকে। তবে দেশটির পরিস্থিতি সবসময় এমন ছিল না। এটি এমন এক দেশ যেটির প্রতিষ্ঠার প্রথম ৪০ বছরে ১৬টি সামরিক আইন দেখেছে। অধিকাংশ সময়ই এটি স্বৈরাচারী নেতার শাসনাধীন ছিল। আর ঠিক এই কারণেই দক্ষিণ কোরীয়রা গণতন্ত্রকে অনেক কষ্টে অর্জিত অধিকার হিসেবে দেখে। চলতি সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ইউন যখন দেশটির ৪৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সামরিক আইনের ঘোষণা দিলেন, তাও আবার এমন একটি সময় যখন দেশটি গণতান্ত্রিক শাসনের অধীন, তা দেশজুড়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং মানুষের মনে আবারও উদ্বেগের জন্ম হয়।
এই ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গেই এটি বাতিলের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির দিকে ছুটে যান আইন প্রণেতারা। সেনাদের আটকাতে রাস্তায় জড়ো হন শত শত সাধারণ মানুষ। সেনাদের নির্দেশ দেওয়া ছিল, তারা যেন এমপিদের বের করে দেয়। তবে ধারণা করা হয়, কিছু সেনা সরকারের এমন আদেশ পালন করতে চাননি। তারা বিক্ষোভকারীদের সরাতে এবং ভবনে প্রবেশে বাঁধা দিতে তেমন কোনও ভূমিকা রাখেনি বলেও রিপোর্ট রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন ঘোষণার সময় ইউন বলেছিলেন, এটি ‘উত্তর কোরিয়াপন্থি শক্তিকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজন।’
ঘোষণার প্রথম দিকে দক্ষিণ কোরীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। তারা মনে করেছিলেন, সত্যিই বুঝি উত্তর কোরিয়া থেকে কোনও হুমকি রয়েছে।
তবে যখন টেলিভিশনে প্রচারিত ইউনের ঘোষণা তারা দেখেন তখন অনেকের মনেই সন্দেহ জাগে। কেননা, এ সময় তিনি এমন কোনও শক্তির প্রমাণ দেননি এবং তারা কারা তো ব্যাখ্যাও করেননি।
ইউন যেহেতু আগেও তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে একই ভাষা ব্যবহার করতেন তাই সাধারণ মানুষের বুঝতে সময় লাগেনি, তিনি আসলে রাজনৈতিক শত্রুদের পরাস্ত করতেই এতকিছু করেছেন।
এর আগে, যখনই সামরিক আইন জারি করা হয়েছিল, নেতারা তখন এর পক্ষে একই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, দেশের স্থিতিশীলতার জন্যই সেটি করা হচ্ছে। অনেক সময় তো এরকম দাবিও করা হয়েছে যে, উত্তর কোরিয়ার কম্যুনিস্ট দুষ্কৃতিকারীদের দমন করতে এরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দেশে গণমাধ্যম ও মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করেছিল তারা। রাতে কারফিউ জারি এবং মানুষকে গ্রেফতারের ঘটনা ছিল সাধারণ বিষয়। তখন প্রায়ই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতো। বিশেষ করে ১৯৮০ সালের ঘটনা উল্লেখযোগ্য।
ওই বছর দক্ষিণাঞ্চলীয় গাংজু শহরে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ করছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের দমনে সামরিক আইনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চান ডু-হুয়ান। তখন এক নৃশংস সামরিক হামলা চালানো হয় বিক্ষোভকারীদের ওপর, যেটিকে পরবর্তীতে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ১৯৩ বলা হলেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, আরও কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
অবশেষে, জনসাধারণের চাপে ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবারের মতো অবাধ ও সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
গভীর ট্রমা
গত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা পুরো জাতিকে স্থায়ী ও গভীরভাবে এসব বিষয়ে সচেতন করে তুলেছে। ৫৩ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী কেলি কিম বলেন, ‘অধিকাংশ কোরিয়ানদের মধ্যেই সামরিক আইন নিয়ে ট্রমা, গভীর ট্রমা রয়েছে। আমরা চাই না একই জিনিসের বারবার পুনরাবৃত্তি হোক।’
দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন সর্বশেষ সামরিক আইন জারি করা হয় কিম তখন অনেক ছোট ছিলেন এবং তখনকার তেমন কোনও স্মৃতিই তার মনে নেই। তবুও সামরিক আইন ফিরে আসছে ভাবলেই তার বু কাঁপন ধরে যায়। কিম বলেন, সামরিক শাসনে ‘সরকার সব মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে, আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের মূল কাজ সরকারের সমালোচনা করা, যা কি-না সামরিক আইনের অধীনে সম্ভব নয়। আর এটি সত্যিই ভয়ঙ্কর।’
অতীত ইতিহাসের জীবন্ত চিত্রায়ন
গণতন্ত্রের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতা শুধু একটি সমৃদ্ধ নাগরিক সমাজেরই জন্ম দেয়নি বরং, সেই প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পর থেকে ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে, দক্ষিণ কোরিয়ার সৃজনশীল শিল্পগুলো বিকশিত হয়েছে।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার নাটক, টিভি শো, সঙ্গীত ও সাহিত্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছে। সৃজনশীল শিল্পগুলো নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে দেশের অতীতের দিকে নজর দিয়েছে।
এই সৃজনশীল মাধ্যমগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার অতীত ইতিহাসকে সামনে আনার ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে তা জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন, গোয়াংজু’র বিক্ষোভের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে শো তৈরি করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ইতিহাসভিত্তিক শো ভীষণ জনপ্রিয়তা পায় যেগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার বাঘা বাঘা তারকারা অভিনয় করেন।
তরুণ নাগরিকরা আশঙ্কা করছেন, সেই অতীত পরিস্থিতি বুঝি আবারও ফিরে আসতে যাচ্ছে। যদিও তারা জানেন না সামরিক আইনের অধীনে জীবন ঠিক কেমন। বাবা-মা ও বড়দের থেকে জেনেই সামরিক আইন নিয়ে ভয় পায় তারা।
১৫ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থী কওন হু বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ইয়ুনের ঘোষণা শুনেছিলাম শুরুতে আমি বরং খুশিই হয়েছিলাম, যাক স্কুল থেকে তো একটি দিন ছুটি পাব। তবে সেই আনন্দ বেশিক্ষণ টেকেনি। যখনই মনে হয়, আমার প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটবে, তখনই ভয় পেয়ে যাই। আমি ঘুমোতে পারছিলাম না।’
কওন আর বলেন, ‘আমার বাবা এ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, সামরিক আইনের অধীনে তিনি রাতে বাইরে থাকতে পারবেন না। যদিও কাজের জন্য তাকে বাইরে থাকতেই হয়। যখনই তিনি আবার কারফিউ হতে পারে এমন আশঙ্কার খবর শুনলেন তখনই তিনি গালি দিতে শুরু করেন।’
সামরিক আইনের পক্ষেও কথা বলেছেন কেউ কেউ
অবশ্য সব দক্ষিণ কোরীয়রা যে দেশের অতীত নিয়ে এভাবে ভাবে ঠিক তা না। হাংকুক ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেসন রিচি বলেছেন, ‘কোরীয়দের একটি বিশাল অংশ গণতন্ত্রকে ভীষণ মূল্যায়ন করে এবং যুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরশাসন নিয়ে অনুতপ্ত বোধ করে।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী অতীতের বিভিন্ন দমনমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে দেশ এখনও বিভক্ত। বিশেষ করে কমিউনিস্ট বিদ্রোহ প্রতিরোধের জন্য দমনমূলক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া কতটুকু ন্যায়সঙ্গত ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।’
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে এই মত রয়েছে যে, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের জন্য অতীতে সামরিক আইন আবশ্যক ছিল।
গোয়াংওয়ামুনের একটি ক্যাফেতে তার বন্ধু কোহের পাশে বসেছিলেন ৮৩ বছর বয়সী কাং হিউ-সান। এটি সিউলের প্রধান চত্বর ও শহরের প্রতিবাদ সমাবেশের কেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘তখন এমন এক সময় ছিল যা গণতন্ত্র ওে কমিউনিস্ট সমাজতন্ত্রের মধ্যে আদর্শিক যুদ্ধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত ছিল’।
তখন বিপরীত আদর্শগুলো সংঘাতের রূপ নিতো এবং যখনই সেনাবাহিনী এতে হস্তক্ষেপ করত পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে উঠত। এটি ছিল শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করার একটি প্রক্রিয়া যাতে সঠিকভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যায়। কাং বলছিলেন, ‘তবে পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমাদের কাছে এটি ইতিবাচকভাবে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’
তিনি মনে করেন, ‘প্রতিটি সামরিক আইন পর্ব’ দেশকে ‘আরও অনুকূল’ অবস্থানে নিয়ে গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন অবশ্য অন্য দেশগুলোর থেকে আলাদা। দেশটিতে সামরিক আইন মানেই ‘হত্যাকাণ্ড বা অযথা সংঘাত ছিল না’। তবে এবারের বিষয়টি আলাদা। এই বয়স্ক দুই ব্যক্তিই মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ইউনের সামরিক আইন ঘোষণা গ্রহণযোগ্য নয়।
কোহ বরেন, ‘জীবদ্দশায় যদিও আমরা বহুবার সামরিক আইন দেখেছি, তবে এবার তার এই সামরিক আইন ঘোষণার পেছনে কোনও যৌক্তিকতা ছিল না।’
তাদের মতো পরিবেশকর্মী কিমও বেশ আনন্দিত যে, ইউন সফল হননি এবং অবশেষে গণতন্ত্রই বিজয়ী হয়েছে। কিম বলেন, ‘কারণ আমরা গণতন্ত্র পেতে কঠিন লড়াই করেছি, তাই না? আমরা আর এটি হারাতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্র ও জীবনযাপনের স্বাধীনতা ছাড়া, জীবন কী?’
[youtube-feed feed=1]