১১:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা

print news -

৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না গাজীপুর জেলার ২৫৩ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। বেতন বন্ধ থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এনিয়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে বেতন না পাওয়া এই স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে। ২০১১ সালে সিএইচসিপি (গ্রেড-১৪) হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রধানের দায়িত্বে আসেন একজন স্বাস্থ্য কর্মী। দায়িত্ব পেয়ে গ্রামীণ জনপদে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মানে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ঘটালেও সিএইচসিপিগণ নিজেদের একটুও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি গেল ১৩ বছরে।কমিউনিটি ক্লিনিকের

কাপাসিয়া উপজেলার নলগাও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি অমিত চক্রবর্তী বলেন, এক যুগ ধরে একই বেতনে চাকরি করছি, কোনো পরিবর্তন নেই। রাজস্ব খাতে নেওয়ার কথা বললেও এখন বেতনই পাচ্ছি না। এই অবস্থায় সংসার নিয়ে চলা দায় হয়ে পড়েছে। সামনে আমাদের পূজা। অন্যান্য চাকুরীজীবিরা পূজায় বোনাস পায়,আর আমাদের বোনাস তো দূরের কথা বেতনই বন্ধ রয়েছে। বছরের এই সময়টাও পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকতে হবে। আশা করছি স্বাস্থ্যকর্তারা কর্মীদের এই কষ্ট অনুভব করবেন।

৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কাপাসিয়া উপজেলার রায়নন্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মঞ্জুনহার বলেন, স্বল্প বেতনে নিয়মিত কাজ করেও মাস শেষে বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বেতন কেন ছাড়া হচ্ছে না তাও জানি না। উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি সারাদেশের একই অবস্থা।

কাপাসিয়া চান্দুন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মিজান খান শিমুল বলেন, উপজেলার ৫২ জন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা বেতন পেয়ে মা-বাবার ওষুধ কেনা, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারে খরচ বহন করে থাকেন। কিন্তু তিন মাস বেতন বন্ধ থাকায় অনেকেই ধারদেনা করে চলছেন। তাদের বকেয়া বেতন ছাড় দেওয়াসহ সরকারি সুুবিধা পেতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোঃ ইউনুস স্যারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

জেলার একাধিক সিএইচসিপি বলেন, একজন সিএইচসিপি শিশু, কিশোর, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী- পুরুষ সহ গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি সেবা ও সাধারণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। সাধারণ সমস্যা যেমন সাধারণ সর্দি, জ্বর, কাশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখন জীবন বাঁচাতে ভিড় করছেন গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে। এনসিডি রোগের স্বাস্থ্য  শিক্ষা দেওয়া হয় ক্লিনিকে। সাথে ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস চেক করে দেন সিএইচসিপি। প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করেন। যার ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষ হাতের নাগালে পাচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট কোটি কোটি মানুষ। কিন্ত গত জুলাই থেকে অধ্যাবধি তাদের মতো বেতনহীন নিয়মিত সেবা দিচ্ছে সিএইচসিপিগণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক। গেল সরকারের খামখেয়ালিপনা, একগুঁয়েমি ও ব নার শিকার হচ্ছেন সিএইচসিপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার নিয়ে শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।

তারা আরও জানিয়েছেন, ক্লিনিকে সেবা প্রদানের জন্য তিনজন কর্মীর মধ্যে রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী সপ্তাহে ২ দিন ক্লিনিকে সেবা দেন। আর যিনি ক্লিনিকের ইনচার্জ বা নিয়মিত ৬ দিন ক্লিনিকের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ক্লিনিক প্রধান হিসেবে কর্মরত তিনি প্রকল্প না ট্রাস্ট, তা গেল ১৩ বছরেও নির্ধারণ হয়নি। রাজস্বের স্বপ্ন দেখিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে দীর্ঘ এক যুগ। একই প্রতিষ্ঠানে ২জন রাজস্বের কর্মী কিন্তু যিনি প্রতিষ্ঠান প্রধান তিনি প্রকল্প না ট্রাস্ট তার কিছুই জানে না সংশ্লিষ্ট কর্মী।একই প্রতিষ্ঠানে সকল কর্মীদের চাকরি একই সিস্টেমে নিয়োগের উপর জোর দেন। কেউ রাজস্বের, কেউ প্রকল্প বা ট্রাস্টের হলে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় বলে জানান সিএইচসিপিগণ। এমন বৈষম্য মূলক কর্মী নিয়োগে ফুঁসে উঠছে চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি।

একই প্রতিষ্ঠানে কেউ রাজস্ব আবার কেউ প্রকল্প বা ট্রাস্টের! এমন বৈষম্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ সিএইচসিপি’রা। তারা অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান। তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা চাকরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সহ বকেয়া ইনক্রিমেন্ট সহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা চান। কেননা, একই বেতনে চাকরি করছেন দীর্ঘ ১৩ বছর, নেই কোনো ইনক্রিমেন্ট। পাচ্ছেন না ওপির সুবিধাও।

সিএইচসিপি এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসডিপি) (২০১৭-২০২২) অধীন অপারেশনাল প্ল্যানে (ওপিতে) সিএইচসিপিদের ইনক্রিমেন্ট ও ধাপে ধাপে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরের নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো কিছুর বাস্তবায়ন হয়নি। বারবার আশ্বাসেই থেমে আছে সিএইচসিপিদের জীবন।কমিউনিটি ক্লিনিকের

স¤প্রতি ট্রাস্ট বাস্তবায়নে ও সিএইচসিপি’র চাকরি স্থায়ী করণে তোড়জোড় শুরু হলেও বিপত্তি বাঁধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেতন গ্রেড নির্ধারণ নিয়ে। ১৩ বছর পূর্বে সিএইচসিপিগণ চাকরিতে যোগদেন গ্রেড -১৪ হিসেবে। আজ ১৪ বছরে এসে যেখানে উচ্চতর গ্রেড পেয়ে ১২/১৩ হয়ার কথা সেখানে গ্রেড অবনমিত করে ১৬ নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক মিজান খান শিমুল জানান- ট্রাস্ট গঠনে সরকারের আলাদা ব্যয় বাড়বে, আলাদা নীতিমালা এবং দেখভালের জন্য অহেতুক জনবল নিয়োগ ও তাদের বেতন-ভাতা বাবদ অধিক অর্থের অপচয় হবে। দেশে চলমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন নন-মেডিকেল স্বাস্থ্য নিয়োগ বিধিমালা -২০১৮ তে সিএইচসিপি পদ টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে কোন ধরনের ব্যায় বাড়বে না,আর আলাদা প্রবিধানমালা তৈরি করতে হবে না। এটি হলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক। গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪০০০ স্বাস্থ্য কর্মীর বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। এরপরও সকলে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলছে।

সিএইচসিপি এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাস্ট বাতিল চেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে বৈষম্যহীন সকল কর্মীদের চাকরি রাজস্বকরণে দাবি তুলে গত আগস্টের ১৮ ও ১৯ তারিখ হাজার হাজার সিএইচসিপি শাহবাগ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে কর্মস্থলে ফিরে আসলেও গত জুলাই থেকে বেতনহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে স্বাস্থ্য কর্মী সহ তাদের পরিবার-পরিজন। তিনি আরও বলেন, সচিব কমিটির মিটিং হলে আমাদের বেতন পাশ হবে এর আগে বেতন পাশ হচ্ছে না। আমরা এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছি।

সিএইচসিপি এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন বলেন, আগামী সচিব কমিটির মিটিংয়ে যদি আমাদের জনবল রাজস্বকরণের ফাইল ফাইল পাশ না হয় তাহলে দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে নামবো। এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন ছাড় না হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে কাজের আগ্রহ ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

কমিউনিটি ক্লিনিকের
Community Clinic

গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদা আখতার বলেন,কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প হওয়ায় মাঝেমধ্যেই তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন বেতন আসে তখন বকেয়া বতেন সব একসাথে আসে। বেতন বন্ধ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানি তবে এটা উপমহলের কাজ,আমাদের হাতে কিছু নেই।

ট্যাগঃ
জনপ্রিয় সংবাদ

বিয়ানীবাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : অসহায় সাধারন মানুষ

৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা

প্রকাশিত হয়েছেঃ ০৯:১৯:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
print news -

৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না গাজীপুর জেলার ২৫৩ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। বেতন বন্ধ থাকায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এনিয়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে বেতন না পাওয়া এই স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে। ২০১১ সালে সিএইচসিপি (গ্রেড-১৪) হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রধানের দায়িত্বে আসেন একজন স্বাস্থ্য কর্মী। দায়িত্ব পেয়ে গ্রামীণ জনপদে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মানে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ঘটালেও সিএইচসিপিগণ নিজেদের একটুও ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি গেল ১৩ বছরে।কমিউনিটি ক্লিনিকের

কাপাসিয়া উপজেলার নলগাও কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি অমিত চক্রবর্তী বলেন, এক যুগ ধরে একই বেতনে চাকরি করছি, কোনো পরিবর্তন নেই। রাজস্ব খাতে নেওয়ার কথা বললেও এখন বেতনই পাচ্ছি না। এই অবস্থায় সংসার নিয়ে চলা দায় হয়ে পড়েছে। সামনে আমাদের পূজা। অন্যান্য চাকুরীজীবিরা পূজায় বোনাস পায়,আর আমাদের বোনাস তো দূরের কথা বেতনই বন্ধ রয়েছে। বছরের এই সময়টাও পরিবার নিয়ে কষ্টে থাকতে হবে। আশা করছি স্বাস্থ্যকর্তারা কর্মীদের এই কষ্ট অনুভব করবেন।

৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কাপাসিয়া উপজেলার রায়নন্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মঞ্জুনহার বলেন, স্বল্প বেতনে নিয়মিত কাজ করেও মাস শেষে বেতন পাচ্ছি না। আমাদের বেতন কেন ছাড়া হচ্ছে না তাও জানি না। উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। শুনেছি সারাদেশের একই অবস্থা।

কাপাসিয়া চান্দুন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মিজান খান শিমুল বলেন, উপজেলার ৫২ জন কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা বেতন পেয়ে মা-বাবার ওষুধ কেনা, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারে খরচ বহন করে থাকেন। কিন্তু তিন মাস বেতন বন্ধ থাকায় অনেকেই ধারদেনা করে চলছেন। তাদের বকেয়া বেতন ছাড় দেওয়াসহ সরকারি সুুবিধা পেতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোঃ ইউনুস স্যারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

জেলার একাধিক সিএইচসিপি বলেন, একজন সিএইচসিপি শিশু, কিশোর, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী- পুরুষ সহ গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি সেবা ও সাধারণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন। সাধারণ সমস্যা যেমন সাধারণ সর্দি, জ্বর, কাশি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের রোগীরা এখন জীবন বাঁচাতে ভিড় করছেন গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে। এনসিডি রোগের স্বাস্থ্য  শিক্ষা দেওয়া হয় ক্লিনিকে। সাথে ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস চেক করে দেন সিএইচসিপি। প্রয়োজনে উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করেন। যার ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষ হাতের নাগালে পাচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা। সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট কোটি কোটি মানুষ। কিন্ত গত জুলাই থেকে অধ্যাবধি তাদের মতো বেতনহীন নিয়মিত সেবা দিচ্ছে সিএইচসিপিগণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে এই কমিউনিটি ক্লিনিক। গেল সরকারের খামখেয়ালিপনা, একগুঁয়েমি ও ব নার শিকার হচ্ছেন সিএইচসিপি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার নিয়ে শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।

তারা আরও জানিয়েছেন, ক্লিনিকে সেবা প্রদানের জন্য তিনজন কর্মীর মধ্যে রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারী সপ্তাহে ২ দিন ক্লিনিকে সেবা দেন। আর যিনি ক্লিনিকের ইনচার্জ বা নিয়মিত ৬ দিন ক্লিনিকের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ক্লিনিক প্রধান হিসেবে কর্মরত তিনি প্রকল্প না ট্রাস্ট, তা গেল ১৩ বছরেও নির্ধারণ হয়নি। রাজস্বের স্বপ্ন দেখিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে দীর্ঘ এক যুগ। একই প্রতিষ্ঠানে ২জন রাজস্বের কর্মী কিন্তু যিনি প্রতিষ্ঠান প্রধান তিনি প্রকল্প না ট্রাস্ট তার কিছুই জানে না সংশ্লিষ্ট কর্মী।একই প্রতিষ্ঠানে সকল কর্মীদের চাকরি একই সিস্টেমে নিয়োগের উপর জোর দেন। কেউ রাজস্বের, কেউ প্রকল্প বা ট্রাস্টের হলে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় বলে জানান সিএইচসিপিগণ। এমন বৈষম্য মূলক কর্মী নিয়োগে ফুঁসে উঠছে চৌদ্দ হাজার সিএইচসিপি।

একই প্রতিষ্ঠানে কেউ রাজস্ব আবার কেউ প্রকল্প বা ট্রাস্টের! এমন বৈষম্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ সিএইচসিপি’রা। তারা অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের দাবি জানান। তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা চাকরী রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সহ বকেয়া ইনক্রিমেন্ট সহ সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা চান। কেননা, একই বেতনে চাকরি করছেন দীর্ঘ ১৩ বছর, নেই কোনো ইনক্রিমেন্ট। পাচ্ছেন না ওপির সুবিধাও।

সিএইচসিপি এসোসিয়েশন এর কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসডিপি) (২০১৭-২০২২) অধীন অপারেশনাল প্ল্যানে (ওপিতে) সিএইচসিপিদের ইনক্রিমেন্ট ও ধাপে ধাপে রাজস্ব খাতে চাকরি স্থানান্তরের নির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো কিছুর বাস্তবায়ন হয়নি। বারবার আশ্বাসেই থেমে আছে সিএইচসিপিদের জীবন।কমিউনিটি ক্লিনিকের

স¤প্রতি ট্রাস্ট বাস্তবায়নে ও সিএইচসিপি’র চাকরি স্থায়ী করণে তোড়জোড় শুরু হলেও বিপত্তি বাঁধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেতন গ্রেড নির্ধারণ নিয়ে। ১৩ বছর পূর্বে সিএইচসিপিগণ চাকরিতে যোগদেন গ্রেড -১৪ হিসেবে। আজ ১৪ বছরে এসে যেখানে উচ্চতর গ্রেড পেয়ে ১২/১৩ হয়ার কথা সেখানে গ্রেড অবনমিত করে ১৬ নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক মিজান খান শিমুল জানান- ট্রাস্ট গঠনে সরকারের আলাদা ব্যয় বাড়বে, আলাদা নীতিমালা এবং দেখভালের জন্য অহেতুক জনবল নিয়োগ ও তাদের বেতন-ভাতা বাবদ অধিক অর্থের অপচয় হবে। দেশে চলমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন নন-মেডিকেল স্বাস্থ্য নিয়োগ বিধিমালা -২০১৮ তে সিএইচসিপি পদ টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে কোন ধরনের ব্যায় বাড়বে না,আর আলাদা প্রবিধানমালা তৈরি করতে হবে না। এটি হলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক। গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪০০০ স্বাস্থ্য কর্মীর বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। এরপরও সকলে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলছে।

সিএইচসিপি এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ট্রাস্ট বাতিল চেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে বৈষম্যহীন সকল কর্মীদের চাকরি রাজস্বকরণে দাবি তুলে গত আগস্টের ১৮ ও ১৯ তারিখ হাজার হাজার সিএইচসিপি শাহবাগ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে কর্মস্থলে ফিরে আসলেও গত জুলাই থেকে বেতনহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে স্বাস্থ্য কর্মী সহ তাদের পরিবার-পরিজন। তিনি আরও বলেন, সচিব কমিটির মিটিং হলে আমাদের বেতন পাশ হবে এর আগে বেতন পাশ হচ্ছে না। আমরা এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছি।

সিএইচসিপি এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন বলেন, আগামী সচিব কমিটির মিটিংয়ে যদি আমাদের জনবল রাজস্বকরণের ফাইল ফাইল পাশ না হয় তাহলে দাবি আদায়ে আমরা রাজপথে নামবো। এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেতন ছাড় না হলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে কাজের আগ্রহ ও মনযোগ নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। ফলে বিষয়টি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

কমিউনিটি ক্লিনিকের
Community Clinic

গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদা আখতার বলেন,কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প হওয়ায় মাঝেমধ্যেই তাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন বেতন আসে তখন বকেয়া বতেন সব একসাথে আসে। বেতন বন্ধ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানি তবে এটা উপমহলের কাজ,আমাদের হাতে কিছু নেই।