নিউজ ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিশ্চিত করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেও নৌকা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন চার মাঝি। সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে চারটিতেই সমঝোতার দাবিতে নিজস্ব প্রার্থী দিতে চায় আরও চারটি দল।
আসনগুলো হচ্ছে- সিলেট-২ (জাতীয় পার্টি), সিলেট-৩ (জাতীয় পার্টি), সিলেট-৫ (আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ/জাতীয় পার্টি) ও সিলেট-৬ (তৃণমূল বিএনপি/জাতীয় পার্টি)।
সমঝোতা প্রত্যাশী একাধিক দল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। সমঝোতা না হলে সিলেটের এই চারটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা থাকবেন ভোটযুদ্ধে।
নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হাইকমান্ডের নির্দেশেই ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীও মাঠে থাকছেন। তবে শেষপর্যন্ত কে কোন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন সেটা জানা যাবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর): সিলেট-২ আসনে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির মো. আবদুল মান্নান খান, জাকের পার্টির মো. ছায়েদ মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলতাফুর রহমান সোহেল। আগের দুটি নির্বাচনে এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জোটের বলি হয়েছেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীকে ও গত নির্বাচনে। ঐক্যফ্রন্টের (গণফোরাম) প্রার্থী মোকাব্বির খানকে আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে জোটের বলি হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। এবার তিনি ছাড় দিতে নারাজ। দুইবার হাত ছাড়া হওয়া আসনটিতে এবার দলীয় প্রার্থী চায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও। বর্তমান এমপি মোকাব্বির খানের মনোনয়নটি বাছাইয়ে বাতিল হয়ে যাওয়ায় জাতীয় পার্টি এবারো আসনটি পেতে চায়। জাতীয় পার্টি আসনটি পেলে শরিকদের কাছে আসন হারানোর হ্যাট্রিক করতে পারেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ): সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনোয়ারা হোসেন আফরোজ, ইসলামী ফ্রন্টের শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কফিল আহমদ চৌধুরীর মনোনয়ন বৈধ রয়েছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএমএর মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলালের দাখিলকৃত মনোনয়ন বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তিনি আপিল করেছেন। তবে দলীয় প্রার্থিতা পেলেও নৌকার মাঝিকে এবার লড়তে হচ্ছে নির্বাচনী মিত্র জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিকের সঙ্গে।
স্থানীয় জাতীয় পার্টির দাবি আতিকুর রহমান আতিক দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে কাজ করছেন। আগের দুটি নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছেন এবার তাকে দেওয়ার পালা।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ): সিলেট-৫ আসনে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার এবার নির্বাচন করছেন না। এ আসনে আওয়ামী লীগের মাসুক উদ্দিন আহমদ, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আহমদ আল কবীর, জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মো. খায়রুল ইসলাম, তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন শিকদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর সভাপতি মোহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. বদরুল আলমের মনোনয়ন ভোটযুদ্ধে রয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে মাসুক উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করছিলেন। সেবার সিলেট-৫ ও সিলেট-৬ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হন সেলিম উদ্দিন। সমঝোতায় ক্ষমতাসীনরা সিলেট-৫ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে এমপি হন সেলিম উদ্দিন। আর জোটের বলি হন মাসুক উদ্দিন।
এবার আসনটি পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ। এছাড়াও আঞ্জুমানে আল-ইসলাহর সভাপতি মোহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরীও ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতায় এমপি হতে চান। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করার পর থেকে আওয়ামী লীগ তাকে ছাড় দিচ্ছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনে পাচ্ছে বাড়তি মাত্রা। এমনটি হলে ফের কপাল পুড়তে পারে মাসুক উদ্দিন আহমদের।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ): সিলেট-৬ আসনে দাখিলকৃত আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরী, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের মনোনয়ন বৈধ। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এ আসনটি একাধিক দল পাওয়ার লড়াইয়ে থাকায় কপাল পুড়তে পারে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার ব্যাপারে আশাবাদী।