ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গতি ফেরানোর পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট-ও চালু করার দাবি তুলছেন গ্রাহকরা। দেশের ১৪ কোটির বেশি ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে প্রায় ১৩ কোটিই মোবাইলের মাধ্যমে অন্তর্জালের সেবা নেয়।
এই অবস্থায়, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি ফেরানোর পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেট-ও চালু করার দাবি তুলছেন গ্রাহকরা। দেশের ১৪ কোটির বেশি ইন্টারনেট সংযোগের মধ্যে প্রায় ১৩ কোটিই মোবাইলের মাধ্যমে অন্তর্জালের সেবা নেয়।
“মোবাইল ইন্টারনেট এবং সংযোগবিচ্ছিন্ন ক্যাশ সার্ভার চালু না করলে– ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গতিও বাড়বে না। বর্তমানে দেশের সব সংযোগ চালু করার পরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের পুরো ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে” – আজ বৃহস্পতিবার সকালে বলেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ৬,৩০০ জিবিপিএস এর বেশি। ক্যাবল বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট মাধ্যমে এর ৫৫ শতাংশ ব্যবহার হয়। বাকি ৩ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় মোবাইল অপারেটরদের মাধ্যমে।
কিন্তু, এখন কেউই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। তারাও ঝুঁকেছেন ব্রডব্যান্ডে। এতে ব্রডব্যান্ডের ব্যান্ডউইথে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এরমধ্যে লোকাল ক্যাশ সার্ভার বন্ধ থাকার ফলে- আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে বলে জানান দেশের আইএসপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই নেতা।
ক্যাশ সার্ভার হলো তথ্য সংরক্ষণ বা ধারণ করার নির্দিষ্ট নেটওয়ার্ক সার্ভার বা সেবা। এতে স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত ওয়েবপেজ ও অন্যান্য ইন্টারনেট কনটেন্ট সেভ করা থাকে। অস্থায়ী স্টোরেজ বা ক্যাশ থেকে আগের ব্যবহৃত তথ্য প্রদানের নির্দেশ দিয়ে ক্যাশ সার্ভার ইন্টারনেট ডেটার গতি বাড়াতে এবং একইসাথে ব্যান্ডউইথের চাহিদা কমাতে ভূমিকা রাখে।
লোকাল ক্যাশ সার্ভারগুলো– দেশের অভ্যন্তরের সার্ভারে তথ্য বা কন্টেন্ট হোস্ট করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ সাশ্রয়ে বিশাল ভূমিকা রাখে বলেও জানান এমদাদুল হক।
বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা যে পরিমাণ ইন্টারনেট ট্রাফিক তৈরি করেন, তার ৮০ শতাংশের বেশি পূরণ করে স্থানীয় ক্যাশ সার্ভারগুলো।
কিন্তু, এখন ক্যাশ সার্ভার কাজ না করায় সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ট্রাফিক আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বলে জানান আইএসপিএবির সভাপতি।
আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ট্রাফিকের জন্য বেশি মূল্য দিতে হয় বলেও দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা ক্যাশ সার্ভার রাখে। এরমধ্যে সর্ববৃহৎ হলো গুগল ও মেটার ক্যাশ সার্ভারগুলো। কারণ দেশের সিংহভাগ ইন্টারনেট ট্রাফিকই হয় মেটা ও গুগলের জন্য। তবে কে বা কারা এসব ক্যাশ সার্ভারকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সে সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।
নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ – বাংলাদেশ টেলিকমিউনেকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)-র কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ টিবিএসকে বলেন, লোকাল ক্যাশ সার্ভারগুলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোনো নিয়ন্ত্রক আদেশ সম্পর্কে আমি জানি না।
টানা পাঁচদিন বন্ধ থাকার পরে গতকাল দেশের ব্রডব্যান্ড সংযোগগুলো চালু করা হয়। তবে ইন্টারনেটের গতি একেবারেই কম, যে কারণে সাধারণ ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এর আগে গত ১৮ জুলাই সকালে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সাংবাদিকদের জানান, সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক তথ্যপ্রচার রোধে সরকার আগের রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
একইদিন সন্ধ্যায় অজ্ঞাত একদল ব্যক্তি ইন্টারনেট অবকাঠামোসহ সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তিতে ভাংচুর ও নাশকতা করে।
গত ২৩ জুলাই রাজধানীর মহাখালী এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনের পর প্রতিমন্ত্রী জানান, দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে ধবংস হয়েছে বেশকিছু সরকারি ও বেসরকারি সার্ভার। এছাড়া দেশের অন্তত ৪০টি স্থানে ইন্টারনেটের ক্যাবল কেটে ফেলা হয়েছে বা তাতে সন্ত্রাসীরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ফেরাতে প্রকৌশলীরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এরপর গতকাল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সাথে এক বৈঠকের পরে জুনায়েদ আহমেদ পলক জানান, আগামী সোমবারের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
[youtube-feed feed=1]