ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে দেশে-বিদেশে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। রয়েছে কর ফাঁকির অভিযোগ। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘দেশদ্রোহী, স্বঘোষিত রাজাকার ও রাজাকারের বাচ্চা’ ঘোষণা দিয়ে তাদের তালিকা প্রণয়ের দাবিতে সোচ্চার মো. জাহাঙ্গীর আলম এখনো বহাল রয়েছেন বাংলাদেশ হোমিও বোর্ডের রেজিস্ট্রার পদে। যদিও তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষদের মহাসচিব ডা. জাহাঙ্গীর আলম।
জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্যের চাকা খুলে যায় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। তখন নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে হোমিওপ্যাথি বোর্ডের অস্থায়ী সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পান মো. জাহাঙ্গীর আলম। ওই পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেন জাহাঙ্গীর। পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে ২০১২ সালে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি নেন। এখানেই শেষ নয়, কোনো ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই অদৃশ্য শক্তির বলে অস্থায়ী রেজিস্ট্রারও হয়ে যান জাহাঙ্গীর। আর তখনই হোমিওপ্যাথি বোর্ডকে বানান পারিবারিক সম্পত্তি। বদলি, পদোন্নতি, হোমিওপ্যাথি কলেজ অনুমোদন, শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে জাহাঙ্গীর আলমের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য। মিরপুরে ২ কোটি টাকার বাড়ি, ঢাকা-চাঁদপুর রোডে চলাচল করে পাঁচটি বাস, চাঁদপুরে ৫ কোটি টাকায় নির্মিত বাংলোবাড়ি ক্ষণিকালয়। এ ছাড়া ৬৫ লাখ টাকার গাড়ি, জাহাঙ্গীরের ১০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা, ৫০ ভরি সোনাসহ প্রায় ৭৩ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। যার বেশির ভাগই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত। আর সম্পত্তি অর্জন করেছেন হোমিওপ্যাথি বোর্ডকে ব্যবহার করে। সারা দেশে ২৭টি হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ অনুমোদন দেওয়ার বিনিময়ে জাহাঙ্গীর আলম সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
২০২৩ সালে হোমিওপ্যাথি বোর্ড বিলুপ্ত করে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি শিক্ষা ও চিকিৎসা কাউন্সিল গঠন করা হলেও জাহাঙ্গীর আলম এখানেও নিয়ন্ত্রণ করছেন দেশের হোমিও চিকিৎসা শিক্ষা খাত। স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষদের মহাসচিব ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ডা. জাহাঙ্গীর আলম নিজের অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করতে প্রতিষ্ঠা করেন এশিয়ান হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল লীগ। এর দায়িত্ব নিয়েছেন ন্যাশনাল ভাইস প্রেসিডেন্টের। কোটাবিরোধী আন্দোলকারীদের দেশদ্রোহী, স্বঘোষিত রাজাকার ও রাজাকারের বাচ্চা বলে তালিকা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার সব সম্পদের হিসাব আমার আয়কর নথিতে উল্লেখ করা আছে। দুদকের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়েছে তদন্ত চলছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই পোস্ট আমার ফেসবুক আইডি থেকে গেলেও আমি জ্ঞাত ছিলাম না। পরবর্তীতে আমি ওই পোস্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
[youtube-feed feed=1]