• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৪

এইচপিভি টিকা ক্যাম্পেইন যারা মিস করবে তারা আর ফ্রিতে পাবে না

অনলাইন ডেস্ক
8726cc154590955186226b814ed91638 -
print news -

এইচপিভি টিকা নিতে যারা ব্যর্থ হবে, তারা আর পরবর্তীতে এ টিকা বিনামূল্যে পাবে না। এইচপিভি ক্যাম্পেইন পরবর্তীতে আর হবে না। পরের বছর থেকে নিয়মিত ইপিআইয়ের সঙ্গে এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে শুধু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েদের। ফলে এখন যারা পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে আছে তাদের এ টিকা এবারের পরে আর পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে রাজশাহীর মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হলরুমে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে আসন্ন এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভাগীয় পর্যায়ে সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি বক্তৃতায় আনোয়ারুল কবির এসব কথা বলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর এ সভার আয়োজন করে।

সভায় ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার নারীদের জন্য একটি অভিশাপ। এর ফলে আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার নারী মারা যাচ্ছে। অনেকে দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় জীবন কাটায়। এইচপিভির এক ডোজেই ৯৫ শতাংশ এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এখন বিনামূল্যে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে নিজ উদ্যোগে তা ক্রয় করতে ৫ হাজার টাকা লাগবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি টিকার গুণগতমান নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া কোনও টিকা সরকারিভাবে দেওয়া হয় না। এই টিকার কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।’

তিনি এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফল করার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৯ লাখ কিশোরীকে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া হবে। বিভাগের আটটি জেলা ও একটি সিটি করপোরেশনে আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। ইতোমধ্যে এই টিকা দেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে ৯ লাখ ১৭৪ জন কিশোরীকে এই টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা আছে বগুড়া জেলায়। এই জেলায় ১ লাখ ৬০ ৮৮৮ কিশোরীকে দেওয়া হবে টিকা। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪ জন, পাবনা জেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮০ জন, নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৪৬ জন, রাজশাহী জেলায় ১ লাখ ৪৮৮ জন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ২৩ হাজার ৭০১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৯ হাজার ৭৭৭ জন, নাটোর জেলায় ৭৭ হাজার ৮৫ জন ও জয়পুরহাট জেলায় ৩৯ হাজার ৩৮ জন কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

রাজশাহী স্বাস্থ্য দফতরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া প্রায় শেষ। যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে কম-বেশি হতে পারে। তবে এই লক্ষ্যপূরন
করার চেষ্টা থাকবে। প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসায় প্রচার চালানো হয়েছে এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে চালানো হয়েছে। যারা স্কুলের বাইরে আছে তাদেরও এই ক্যাম্পাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এজন্য প্রতিটি মসজিদ ও মন্দিরে প্রচার চালানো হচ্ছে।

রাজশাহী ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবা খাতুন বলেন, অল্প বয়সে বিয়ে, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, ঘন ঘন গর্ভধারণ, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে, ঘন সাদা স্রাব, অতিরিক্ত রক্তস্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব। এইচপিভি টিকা নিরাপদ এবং এ টিকার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে প্রমাণিত।’

রাজশাহী স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরাও এই টিকাদান কার্যক্রমের প্রচার-প্রচারণার অংশ। এই টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভয়ভীতি পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কেউ যদি কোনও ভীতিমূলক কথাবার্তা বলে তাহলে তোমরা তা অগ্রাহ্য করবে। তোমরা অনেক মেধাবী এবং প্রগতিশীল। সরকারের এই সুদূরপ্রসারী ও মহৎ উদ্যোগ নস্যাৎ করার যেকোনও অপতৎপরতা তোমরা রুখে দেবে।’ গার্লস গাইডদের পাশাপাশি শিক্ষকদের এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনকে আরও অংশগ্রহণমূলক করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান তিনি।

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এই টিকা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ডা. মো. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘তুমি তোমার মায়ের কথা চিন্তা করো। এখন যদি তোমার মা না থাকে বা অসুস্থ হয়ে যান তাহলে পরিবারজুড়ে একটি শূন্যতা নেমে আসবে। জরায়ুমুখ ক্যানসারের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার মা মারা যান। একটু সচেতন হয়ে সময়মতো এই টিকা গ্রহণ করলে আমরা এটি প্রতিরোধ করতে পারি।’

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘আজকের কিশোরী আগামী দিনের মা। তাদের সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। নারীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি টিকা সংযোজন করেছে। সারা দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধী এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্যানসার প্রতিরোধে শিক্ষক, অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ কার্যক্রমকে বাস্তবায়িত করতে সবাইকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইতোমধ্যে এই টিকার ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে।’

উল্লেখ্য, আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী ১৮ কর্মদিবস রাজশাহীসহ সাতটি বিভাগে একযোগে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চলবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীরা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০ থেকে ১৪ বছরবয়সী কিশোরীরা কমিউনিটি পর্যায়ে এ টিকা নিতে পারবে। টিকা পাওয়ার জন্য https://vaxepi.gov.bd/ ওয়েবসাইটে অথবা VaxEPI অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্নের পরে ওয়েবসাইটে টিকা গ্রহণের কেন্দ্র হিসেবে স্কুল নির্বাচন করতে হবে। এরপর টিকা কার্ড ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্কুলে টিকা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

[youtube-feed feed=1]