বিশেষ প্রতিনিধি:: সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: দেলোয়ার হোসেন এর দিক নির্দেশনায় বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য “ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প” আয়োজন করা হয়েছে। ৫নং কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গারজুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪নং শেওলা ইউনিয়নের শেওলা বাজারে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হয় । প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব দুঃখী মানুষদের মাঝে ফ্রি-মেডিকেল সেবা ও ঔষধ বিতরন সহ ক্যাম্পে গর্ভবতী মা ও কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং সাধারণ চিকিৎসা প্রদান করা হয় । প্রয়োজনে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে উপজেলা ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রেফার করা হয় । আগ্রহী রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কেন্দ্র গুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড় । একযোগে ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের মাঝে এ সেবা প্রদান করা হয় ।ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন, ৫নং কুড়ারবাজার ইউপি চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান, ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন কিরন, আব্দুল মানিক, আবুল হাসনাত সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা: মেহদী আহমদ মুন্না ও এমওডিসি ডা: শাহরিয়ার হোসেন শুভ । সহযোগীতায় ছিলেন, ঘুঙ্গাদিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো: ছায়ফুল আলম রুকন ও খশিরবন্দ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি গোপাল চন্দ্র দাস, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক বদরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য সহকারী সসীম সরকার, পরিবার কল্যান সহকারী দিপ্তি রানী বিশ্বাস।
ডা: মেহদী আহমদ মুন্না বলেন, বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা যায়। এর মধ্যে পানি ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের সংখ্যাই বেশি। বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা একাকার হয়ে এসব উৎস থেকে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়।
বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে মানুষের ক্ষেত্রে জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, কলেরা, রক্ত আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ভাইরাল হেপাটাইটিস, পেটের পীড়া, কৃমির সংক্রমণ, চর্মরোগ, চোখের অসুখ প্রভৃতি সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করে। ফলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়া হতে পারে।
বন্যার সময় যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা হয়:
- বন্যার সময় পানিবাহিত রোগগুলো বেশি হয়। কারণ, তখন পানির উৎসগুলো সংক্রমিত হয়। নলকূপ ডুবে যায়। বিশুদ্ধ পানির অভাব, দূষিত পানির কারণে এ রকম হয়।
আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস হয় সবচেয়ে বেশি। তাই এই রোগগুলো থেকে সতর্ক থাকতে হবে। - কিছু মশাবাহিত রোগ হয়, যেমন—ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু। আটকে থাকা পানিতে এই রোগের জীবাণুগুলো সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে।
- ফাঙ্গাসজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়, বিশেষ করে বন্যা-পরবর্তী সময়টাতে। এ সময় নানা রকম চর্মরোগ, চোখের অসুখ হয়। স্ক্যাবিস, আঙুলের মাঝখানে ঘা, টিনিয়া ইনফেকশন এ সময়ে খুব বেশি দেখা যায়।
- কৃমির প্রকোপ বাড়ে এ সময়ে।
- আবহাওয়া ও তাপমাত্রার তারতম্যজনিত কারণে নানা রকম ভাইরাসজনিত অসুখ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি দেখা দেয়।
ডা: শাহরিয়ার হোসেন শুভ বলেন, বন্যা পরিবর্তী ও বন্যা কালিন সময়ে আমাদের যা যা করতে হবে।
- বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করাই হলো প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।
- পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। খোলা পানি পান করবেন না।
- প্রয়োজনে হ্যালোজেন ট্যাবলেট দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে নিতে হবে। প্রচলিত ফিল্টার দিয়ে পানির জীবাণুমুক্তকরণ সম্ভব হয় না।
- বাড়িতে সব সময় শুকনো খাবার মজুদ রাখার চেষ্টা করুন। খাবার স্যালাইনও যেন পর্যাপ্ত থাকে।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। খাবার খাওয়ার আগে ও পায়খানা করার পর হাত ধুতে সাবান ব্যবহার করবেন।
- সব সময় হাত-পা পরিষ্কার রাখবেন। বন্যার পানিতে বেশিক্ষণ পা ডোবালে ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে। তাই বারবার কুসুমগরম পানি দিয়ে হাত-পা ধুয়ে শুকনা কাপড় দিয়ে হাত-পা শুকিয়ে নিতে হবে।
- কৃমিনাশক ওষুধ খেতে হবে।
- জ্বর, জন্ডিস, পেটের অসুখ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
প্রকৃতির এই দুর্যোগ কেটে যাক দ্রুত। সবাই ভালো থাকুক। অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকুক।
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল পঞ্চবানী.কম এ লিখতে পারেন আপনিও। খবর, ফিচার, ভ্রমন, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি, খেলা-ধুলা। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন newsdeskpb@gmail.com ঠিকানায়।